ব্লগিং করে টাকা ইনকাম মাসে ২৫-৩০ হাজার

Home / Single Post

ব্লগিং করে টাকা ইনকাম বা লেখা লেখি করে ইনকাম, এই ব্যাপারটা আমার কাছে সবসময়ই দারুণ আকর্ষণীয় মনে হতো। কলেজে থাকতে আমি আমার টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটা সাধারণ ব্লগ শুরু করেছিলাম। শুরুতে তা ছিল শুধুমাত্র নিজের উৎসাহটা ভাগাভাগি করার জায়গা। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আমার দর্শক বাড়তে শুরু করল, আমি ভাবতে লাগলাম, “এটা কি শখের চেয়েও বেশি কিছু হতে পারে?

পরে দেখা গেলো, ব্লগিং একেবারেই একটা লাভজনক পেশা হতে পারে। যদি আপনি কোনো বিষয়ে আগ্রহী হন এবং লেখালেখিতে ভালো হন, আপনিও আপনার ব্লগকে আয়ের উৎসে পরিণত করতে পারেন। চলুন এবার ব্লগ থেকে টাকা উপার্জনের ব্যবহারিক উপায়গুলো একটু ঘেঁটে দেখা যাক।

ব্লগিং করে টাকা ইনকাম এর উৎসগুলো কি?

ব্লগ থেকে টাকা ইনকাম এর মূল বিষয়টা বেশ সহজ: আপনি ভালো কন্টেন্ট তৈরি করুন, পাঠকদের আকর্ষন করুন আর সেই পাঠকসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে আয় করুন। এখানে সবচেয়ে প্রচলিত কিছু আয়ের উৎস রয়েছে যা নিচে দেওয়া হলঃ

  • বিজ্ঞাপন: গুগল অ্যাডসেন্সের মতো বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখান। ব্লগে প্রতিটি ক্লিক বা ইম্প্রেশনের জন্য আপনি টাকা পাবেন।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: আপনার বিষয়ের সাথে মিলে যায় এমন পণ্য বা সেবার প্রচার করুন এবং আপনার অনন্য অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কের মাধ্যমে হওয়া বিক্রির উপর কমিশন নিন।
  • নিজস্ব পণ্য বিক্রি: ডিজিটাল পণ্য (ই-বুক, কোর্স, প্রিন্টেবল) বা নিজের ডিজাইন করা পণ্যসামগ্রী বানিয়ে সেগুলো আপনার পাঠকদের কাছে বিক্রি করুন।
  • সেবা প্রদান: আপনার দক্ষতা তুলে ধরার জন্য ব্লগটিকে একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করুন। ব্লগ থেকে ফ্রিল্যান্স লেখালেখি, কনসাল্টিং বা কোচিং-এর সুযোগ বের হতে পারে।
  • স্পনসর্ড কন্টেন্ট: ব্র্যান্ডের সাথে সহযোগিতায় স্পনসর্ড ব্লগ পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বা পণ্যের পর্যালোচনা করুন।

ব্লগ থেকে ক্যারিয়ার একটি বাস্তব ঘটনা

এই গল্পটা এমন একজনের সম্পর্কে যেকিনা এসইও (SEO) এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর বস বলা চলে। তবে তার শুরুটা হয়েছিল এই ব্লগিং থেকেই। তার নাম Neil Patel, লন্ডনে জন্ম হলেও তার পিতা ২ বছর বয়সেই তাদের নিয়ে আমেরিকায় পারি জমায়।

তার জীবন থেকে নেয়া, সে যখন ১৬ বছরের যুবক ও একজন ছাত্র। তখন ২০০১ সালে সে তার প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং তার ক্যারিয়ার শুরু করার কথা চিন্তা করে। এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর ট্রেনিং করে। তারপর সে তার নিজের শিক্ষা ও জ্ঞানটাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর সেবা ও ব্লগিং লেখা শুরু করলেন।

কারন সে টিন্তা করেছিলেন যে, তার জ্ঞানটা সবার মাঝে বিলিয়ে দিবেন। তারপর সে আস্তে আস্তে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন এই ডিজিটাল মার্কেটিং ও ব্লগার হিসেবে। এখন তার ওয়েবসাইটের প্রতিদিনের ভিজিটর কয়েক লাখেরও বেশি। কিন্তু তার এই পথচলাটা অনেক বেশি সহজ ছিল না।

এছাড়াও নিল প্যাটেল এর মত আরো অনেক সফল ব্লগার আছেন যেমন – ড্যারেন রোজ, সৈয়দ বালখি, এবং জেফ বুলাস ইত্যাদি। তারা সকলেই জিরো থেকে শুরু করেছিল। কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি তারা হয়তো জানতো যে এই কাজে সফলতা তার আসবেই। এজন্যই মনের জোরটা অনেক বেশি জরুরি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য।

আরো পড়ুনঃ

পরিসংখ্যান: ব্যাপারটা কি আসলেই সম্ভব?

কনভার্টকিট (ConvertKit) -এর এক জরিপ অনুযায়ী, প্রফেশনাল ব্লগারদের ১৪% তাদের পরিবার চালানোর মত যথেষ্ট উপার্জন করেন, অন্যদিকে ৮১% ব্লগ থেকে অন্তত কিছু আয় করেন। উৎস: কনভার্টকিট: https://convertkit.com/

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এখনও বেশ লাভজনক। বিজ্ঞাপন প্রচারণার ফলে প্রতি ১০০ ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রির জন্য পাবলিশাররা গড়ে ৬৫ ডলার পর্যন্ত আয় করেন https://www.viglink.com/)]।

সাফল্যের মূল উপাদান

এক রাতেই ব্লগকে আয়ের মাধ্যমে পরিণত করা যায় না। সাফল্য পেতে হলে এই বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরী:

  • দুর্দান্ত কন্টেন্ট: মূল্যবান তথ্য দিন, শিক্ষামূলক লেখা লিখুন বা পাঠকদের মন ভরানোর মত আকর্ষণীয় লেখা তৈরি করুন।
  • ধারাবাহিকতা: পাঠক তৈরি হতে এবং আয় করতে সময় লাগে। নিয়মিত ব্লগ পোস্ট করুন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ব্লগের প্রচার চালান।
  • ধৈর্য: তাৎক্ষণিকভাবে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখা বাস্তবসম্মত নয়। দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধি এবং আপনার পাঠকদের বিশ্বাস অর্জনের দিকে মনোযোগ দিন।

আপনার আয়ের পথ বেছে নিন

এককভাবে কোনো ‘সেরা’ পদ্ধতি নেই। ব্লগের মূল বিষয়, আপনার দক্ষতা এবং পাঠকদের চাহিদা মাথায় রেখে উপযুক্ত উপার্জনের পদ্ধতিগুলো নির্বাচন করুন। বিভিন্ন উপায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা এবং আপনার আয়ের উৎসে বৈচিত্র্য আনাটা প্রায়শই বুদ্ধিমানের কাজ।

অতিরিক্ত পরামর্শ

  • নির্দিষ্ট বিষয়ে ব্লগ লেখা: সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করবেন না। একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে লেখালেখি করলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণকারী পাঠকগোষ্ঠী তৈরি হবে, যা আরও ভালো ফলাফল দিতে পারে।
  • ইমেইল তালিকা তৈরি করুন: পাঠকদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারের জন্য ইমেইল সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর একটি।
  • অন্যান্য ব্লগারদের সাথে নেটওয়ার্ক করুন: আপনার ধরণের বিষয় নিয়ে যারা ব্লগ লেখেন তাদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে আপনার প্রভাব বিস্তার করুন।

কেন ব্লগিং করবেন

ব্লগিং একটি স্বাধীন পেশা আপনি যখন চান যেসময় চান এটা শুরু করতে পারেন। এবং ইচ্ছামতো আপনার ব্লগে কাজ করতে পারেন। এখানে কাজের কোন চাপ থাকে না বা কোন ক্লায়েন্টের ঝামেলাও নাই। এছাড়াও এই ব্লগের মাধ্যমে একজন ব্লগার তার প্রতিভা সারা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে পারেন।

ব্লগিং করার প্রবনতা বা চাহিদা দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারন এটা একজন ছাত্র তার কলেজ জীবন থেকেই শুরু করতে পারে অথবা একজন চাকুরিজীবি তার কাজের পাশাপাশি লেখা-লেখি করে চালিয়ে যেতে পারে। তারপর এক সময় দেখা যাবে এই ব্লগিং তার আয়ের একটা বড় উৎস হয়ে উঠেছে।

ব্লগিং সাইট থেকে আয়ের পরিমান দিন-দিন অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে একজন ব্লগার হিসেবে মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা তোলা খুবই সহজ। শুধুমাত্র আপনাদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে কাজ করতে হবে।

ব্লগিং কেন করবেন তার আরেকটি বড় কারন, এটা শুরু করতে কোন ইনভেস্টমেন্ট দরকার পরে না। কারন আপনি প্রথম দিকে চাইলে গুগল এর ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস এ আপনার জন্য একটা ফ্রি ব্লগিং সাইট ওপেন করতে পারেন যা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং প্রতিনিয়ত সেখানে লেখা পোস্ট করতে পারবেন।

ব্লগিং করে টাকা ইনকাম এর উৎস কি

ব্লগিং করে টাকা উপার্জন কিভাবে করা যায় বা এর আয়ের উৎস কি? এই প্রশ্নটা আসলে অনেকের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। কারন আপনি আপনার মূল্যবান সময় এখানে ব্যয় করবেন। অবশ্যই কোন না কোন লাভের আশায়। আপনি চাইলে একটা ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন তার মধ্যে থেকে প্রধান কিছু আয়ের বর্ননা নিচে উল্ল্যেখ করা হল।

ব্লগিং করে টাকা ইনকাম এর কিছু উৎস দেওয়া হলঃ

১. গুগল এডসেন্স

২. নিজ অভিজ্ঞতার উপর মার্কেটিং

৩. ব্লগে সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশ

৪. নিজের পণ্য বিক্রি

৫. এফিলিয়েট মার্কেটিং

এখন আমরা আপনাদের এই বিষয়টি আরো সহজ করে বোঝানোর জন্য এই সকল উৎসের উপরে সংক্ষিপ্ত কিছু বর্ননা করবো।

১. গুগল এডসেন্স

গুগল এডসেন্স বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বড় অনলাইন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্লাটফর্ম। এই গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লগ সাইটে মোনিটাইজেশন এর মাধ্যমে এ্যাড প্রদর্শন করে ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

একটা গবেষনায় পাওয়া যায় যে, ৮০% ব্লগার ইনকাম করেন এই গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে। গুগল এডসেন্স থেকে আয় করা অনেক সহজ। এর জন্য দরকার আপনার সাইটে মিনিমাম প্রতিদিন ১০০ জন অর্গানিক ভিজিটর। যত বেশি দর্শক বা ভিজিটর আপনার সাইটে প্রবেশ করবে গুগল এর বিজ্ঞাপন দেখে আয় ততটা বৃদ্ধি পাবে।

এই বিজ্ঞাপন দেখে আয় করাকে RPM (Revenue Per mile) বলে থাকে। তবে এ্যাড এর উপর ক্লিক পরলে এর ইনকামটা আরো বেশি হয়।

তবে বর্তমানে একটা সাইটে গুগল এর বিজ্ঞাপন পেতে অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। কোন কপি-পেস্ট করলে হবে না। কারন গুগল এখন থেকে তাদের মনিটাইজেশন এর উপর অনেক বেশি স্ট্রিক হয়েছে। তারা আপনার সাইটের প্রধান কিছু বিষয় চেক করে যেমন- আপনার সাইটে অর্গানিক ভিজিটর কেমন, সাইটের কন্টেন্টগুলো ইউনিক কিনা, সাইটের অর্গানিক কিওয়ার্ড আছে কিনা, এবং সাইটের বয়স নিম্নে ৩ মাস হয়েছে কিনা। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটার কিছু পরিবর্তন হতে পারে।

২. নিজ অভিজ্ঞতাকে ফ্রিল্যান্স করুন

ব্লগিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার নিজের যে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান আছে সেসকল বিষয়ে আপনি প্রশিক্ষন প্রদানের জন্য আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। যার ফলে নিজের একটা ফ্রিল্যান্স আয়ের ব্যবস্থা হবে।

মনে করুন আপনি একজন ভাল ওয়েব ডেভেলপার বা একজন ভাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। এখন আপনার এই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে আপনি কিন্তু অনলাইনে ট্রেনিং বা টিপস শেয়ার করতে পারেন। এবং অবশ্যই সেগুলো আপনি পেইড আর্টিকেল এ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

এখন বর্তমানে অনলাইনের ট্রেনিং এর পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি চাইলে আপনার কোন একটা পোস্ট এর মাধ্যমে অনলাইনের কোর্সের কোন অফার প্রদান করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনার সাইটের ভিজিটর যদি ভাল থাকে তাহলে আপনি সেখান থেকে ভাল একটা ফলাফল পেতে পারেন।

এখনকার এই ডিজিটাল অগ্রগতিতে আপনি কেন পিছিয়ে থাকবেন। তাইতো আপনার যদি এমন কোন ট্রেনিং দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে আপনিও হতে পারেন একজন ভাল অনলাইন মেনটর।

৩. ব্লগে সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশ

একটা ব্লগ যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তখন সেই ব্লগে অনেকেই চাই টাকার বিনিময়ে তাদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিতে। তাইতো আপনি যদি চান যে না আমি আমার সাইটে গুগল এডসেন্স এর বিজ্ঞাপন না দিয়ে লোকাল কোম্পনীর বিজ্ঞাপন দিবেন এটা ভাল ডিসিশন। তবে সবসময় এটা ভাল নাও হতে পারে।

কারন আপনার এই বিজ্ঞাপন ম্যানেজ করার জন্য একটা লোক দরকার। এবং প্রতিনিয়ত ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন পরবে যখন কোন বিজ্ঞাপন এর মেয়াদ শেষ হবে।

এই সকল ঝামেলা যদি আপনি কন্ট্রোল করতে পারেন তাহলে এমন সরাসরি বিজ্ঞাপন দেখিয়েও অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রকাশের ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব একটা কন্ট্রোল থাকে কিন্তু গুগল এডসেন্স এ কোন নিজস্ব কন্ট্রোল থাকে না। গুগলে আপনার শুধুমাত্র কোড বসাতে হবে আর বিজ্ঞাপন গুগল ই সিলেক্ট করে দিবে যে কি এ্যাড প্রদর্শিত হবে।

৪. নিজের পণ্য বিক্রি

নিজের ব্লগে নিজের পন্য শুনতে খুব সুন্দর লাগে না?

হ্যা, অবশ্যই আপনার নিজের যদি কোন পন্য থাকে। তাহলে আপনি চাইলেই আপনার নিজের ব্লগে তার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারেন।

এই পয়েন্টে একটা গল্প মনে পরে গেল, একজন নতুন লেখক তার নিজের একটা বই লিখলেন প্রায় দীর্ঘ ২ বছর ধরে। এখন সে চিন্তা করলেন যে তার এই বইটা সে বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপন দিবেন। কিন্তু বিভিন্ন মহলে ঘুরে সে দেখলো যে সবাই অনেক বেশি টাকা চার্জ করছে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য।

তখন সে নিজে নিজেই একটা ব্লগ তৈরি করার কথা চিন্তা করলেন এবং সেখানেই সে তার বই এর বিজ্ঞাপন দিলেন। হ্যা, প্রথম দিকে তার অনেক বেগ পেতে হয়েছে কিন্তু পরবর্তিতে তার আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগে নি। তার বইটাতো বিক্রি হলোই সাথে সাথে তার ব্লগটাও জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এটাই ডিজিটাল বিজনেস আইডিয়া যখন-তখন যেকোন কিছুই সম্ভব।

এই গল্প থেকে একটা বিষয় শিক্ষা নেওয়া যায় যে, কোন কিছু মন থেকে বিশ্বাস করলে তার ৫০% কাজ হয়ে যায় বাকি ৫০% কাজ করতে নামলেই হয়ে যাবে। এখানে সেই বই বিক্রেতা যদি তার বিজ্ঞাপন অন্য সাইটে দিতেন তাহলে না হলেও ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হত এবং সেই বিজ্ঞাপন এর একটা টাইম লিমিট থাকতো হয়ত ১মাস বা ২ মাস।

কিন্তু নিজের একটা ব্লগ তৈরি করতে সর্বোচ্চ খরচ ৫ হাজার টাকা। এবং এখানে কোন টাইম লিমিট নেই তার যতদিন খুশি সে এখানে এ্যাড দিয়ে রাখতেই পারে কোন খরচ হবে না।

আশাকরি আপনারা আস্তে আস্তে বুঝতেই পারছেন যে ব্লগিং এর চাহিদা বা পরিধি কতটা।

৫. এফিলিয়েট মার্কেটিং

এখন আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল এফিলিয়েট মার্কেটিং। মার্কেটিং কথাটা শুনলেই কেন যেন মনে হয় দোকানে-দোকানে ঘুরে পন্য বিক্রি করা। কিন্তু না আমরা এখন কথা বলছি অনলাইনে পন্য বিক্রির কথা।

আপনারা কমিশন এর কথাটাতো শুনেই থাকবেন যে কোন একটা পন্য বিক্রি করলে বিক্রেতারা কিছু কমিশন পান। এটাও ঠিক তেমন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং হল অনলাইনে অন্যের পন্য মার্কেটিং করে আয় করা। বিশ্বের বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এই সুবিধাটা দিয়ে থাকেন যেমন- আমাজন, আলিএক্সপ্রেস, ইবেই ইত্যাদি।

উপরে উল্লিখিত সাইটগুলোতে আপনি একাউন্ট ওপেন করে যেকোন প্রডাক্ট এর উপর আপনি নিজস্বভাবে মার্কেটিং করে পন্য সেল করতে পারলে আপনি প্রতিটা প্রডাক্ট সেল এর উপর কমিশন পাবেন। এবং এই বিজ্ঞাপন আপনি আপনার ব্লগ সাইটেও প্রদর্শন করতে পারেন।

আপনার সাইটের এ্যাড দেকে যদি কেউ সেটার উপর ক্লিক করে পন্যটি ক্রয় করে বা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোন প্রডাক্ট ক্রয় করে তবে আপনি তার ক্রয়ের উপর কমিশন পাবেন। এবং এই কমিশনটি আপনার একাউন্টে জমা হবে।

এই এফিলিয়েট মার্কেটিং এর আয় দিন-দিন অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। এজন্য এসকল মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ব্লগ থেকে অনেক বেশি আয় করা যায়।

অনেকেই একটা প্রশ্ন করে থাকে যে এত বড় বড় সাইট যে প্রডাক্টগুলো বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছে সেই পন্য আমার ব্লগে দিলে কি বিক্রি হবে। আমি একটা কথা বলেই এর উত্তর দিচ্ছি। মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকে সমান বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠাননি।

এই জন্যই আপনি যদি আপনার ব্লগে একটা পন্যকে অন্যভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনার পন্য কিন্তু বিক্রি হতে বাধ্য। মার্কেটিং আসলে একটা আর্ট।

নিচে আপনাদের সুবিধার্থে কিছু প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া হলঃ

ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?

দেখুন, ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায় এর সঠিক হিসাবতো নাই, তবে আপনি আনলিমিটেড আয় করতে পারবেন। ব্লগিং এর মত এত উপায়ে আয় আর অন্য কোন প্লাটফর্ম থেকে করা যায় না। তবে, আপনি যদি এশিয়া অঞ্চলের হন তবে ৫০,০০০ হাজার মাসিক পেজ ভিউতে প্রায় ৩০০/৪০০ ডলার পাবেন এবং আমেরিকা বা ইউরোপ হলে এটা ৮০০/১০০০ বা তারও বেশি হতে পারে।

কোন প্লাটফর্ম থেকে ব্লগ তৈরি করা যায়?

আপনি যদি এই ব্লগিং প্লাটফর্মে নতুন হন এবং ওয়েব এর উপরে বেসিক স্কিল থাকে তাহলে আমি বলবো ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি করুন। অন্যথায় আপনি ফ্রি শুরু করতে চাইলে, গুগলের ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেস থেকে ফ্রি শুরু করতে পারেন।

ব্লগ দিয়ে কত টাকা আয় করা যায়?

অবশ্য উত্তরটি আমি উপরে একবার দিয়েছে। তবুও বলছি এটা অনেক বড় একটি ইনকামের সুযোগ ব্লগ থেকে।

ব্লগার দিয়ে কি আয় করা যায়?

হ্যা আপনি ব্লগার দিয়ে আয় করতে পারবেন। এবং অনেক ভাল ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন। শুধুমাত্র আপনাকে কিছু গাইডলাইন ফলো করতে হবে। ব্লগিং সম্পের্কে জানতে আমাদের “নতুন ব্লগারদের জন্য টিপস 2023” পোষ্টটি পড়ে আসুন।

ব্লগ থেকে আয় করার জন্য কিসের অ্যাপ্রভাল প্রয়োজন হয়?

ব্লগ থেকে আয় করার জন্য আপনাকে গুগর অ্যাডসেন্সের অ্যাপ্রভাল নিতে হবে। তবে এই অ্যাপ্রভাল নেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম কানুন আছে। সম্পূর্ন জানতে ক্লিক করুন ২১ দিনে ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন গুগল এডসেন্স 

ফ্রি ব্লগ থেকে আয় করা যায়?

হ্যা, ফ্রি ব্লগ থেকে আয় করা যায়। উপরে এটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আমাদের কিছু কথাঃ

পরিশেষে এমন কিছু কথা আপনাদের বলে যেতে চাই যেগুলো শুনে আপনাদের কিছুটা হলেও মনের প্রশান্তি মিলবে।

আপনি যদি আমাদের এই লেখাটা পরে মনস্থির করেন যে আপনি একজন ব্লগার হবেন তাহলে আমার মনে হয় আপনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

আপনি কি জানেন বাংলায় ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?

আসলে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ সঠিকভাবে দিতে পারবে না। কারন এ সকল আয়ের কোন লিমিটেশন হয় না তবে আনুমানিক প্রায় ১০০ হতে ২০০ ডলার যা আপনার মনিটাইজেশন পাওয়ার ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। তবে যদি আপনার সাইটের ভিজিটর সংখ্যা বেশি হয় তাহরে আরো বাড়তে পারে।

একটা ব্লগের আয় সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরকরে সেই ব্লগের ট্রাফিকের উপর। আপনার ব্লগে ভিজিটর বা ট্রাফিক যত বেশি হবে আপনার ব্লগ থেকে আয় তত বেশি হবে। ব্লগের আয় নির্ভর করে আরও একটি বিষয়ের উপর আর সেটা হল ইমেইল লিষ্টের উপর।

আপনার ইমেইল লিষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্লগের আয় বৃদ্ধি পায়। কারন, আপনার ইমেইল লিষ্ট থাকলে সেই লিষ্টের ব্যক্তি গুলোর কাছে আপনার ব্লগের নিউ পোষ্টের প্রচারনা চালাতে পারবেন।

আপনাদের আরেকটি ধারনা দেয় ইংরেজি ব্লগিং বিষয়ে। একটি ইংরেজি প্রথম শ্রেনীর ব্লগ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার হতে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় হয়। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এবং এই আয় দিনে দিনে অনেক বৃদ্ধি পায়। এমনও ব্লগ আছে যারা মাসে 5 লক্ষ ডলার এর বেশি আয় করে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। Ex.- HoWToGeek, PCMag

অনেকেই এমন কথা শুনে বিশ্বাস করে না। মনে করে এত টাকা আবার অনলাইনে আয় করা যায় নাকি। এটাই সত্যি। এখন টেকনলোজির যুগ সবই অনলাইনে সম্ভব। তাইতো আর দেরি না করে আপনিও শুরু করুন আজ থেকে।

আমি আশা করি আপনি যদি আমাদের উপরের গাইডলাইন সমূহ মনোযোগ সহকারে অনুসরন করেন। তাহলে দেখা যাবে আপনিও ৬ মাস পরে হয়ে উঠবেন একজন ব্লগার। আর যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

সবার জন্য সুভকামনা-ভাল থাকুন! সুস্থ থাকুন। – আল্লাহ্ হাফেজ!

Facebook
Twitter
LinkedIn

3 Responses

Leave a Reply

We have over 230 satisfied and happy customers.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit ut elit tellus.