গুগল কোর আপডেট: মার্চ ২০২৪ নতুন স্প্যাম নীতিমালা!

TechPoth
9 Min Read
গুগল কোর আপডেট: মার্চ ২০২৪ নতুন স্প্যাম নীতিমালা!

গুগল কোর আপডেট: ওয়েব নির্মাতাদের জন্য বিশাল নিউজ

গুগল অফিসিয়ালভাবে ৫ই মার্চ ২০২৪ তারিখে ঘোষনা করেছে তাদের নতুন কোর আপডেট। এই আপডেট এর মাধ্যমে সার্চের মান আরও ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হলেও যে সকল কন্টেন্টের মান বা উপকারীতা খুব কম সেগুলো কম প্রকাশিত হবে এবং যেসকল কন্টেন্টের মান ভাল সেটা বরাবরের মত সবার উপরে থাকবে।

এছাড়াও গুগল আরো জানিয়েছি যে গুগল সার্চের ফলাফলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এমন কৌশলগুলোর বিরুদ্ধে চালু করেছে তাদের নতুন স্প্যাম নীতিমালা ২০২৪। এই পোস্টে আমরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য গুগল কোর আপডেট এবং স্প্যাম নীতিমালা উভয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

- Advertisement -

পড়ুন: গুগল সেবা প্রদানে কেন বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আছে জেনে নিন?

মার্চ ২০২৪ গুগল কোর আপডেট কেন গুরুত্বপূর্ণ?

এই আপডেট গুগলের অন্যান্য কোর আপডেটের তুলনায় অনেক বেশি জটিল, কারণ এখানে অনেকগুলো মূল অ্যালগরিদমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার মাধ্যমে সঠিক ও উপযোগী কন্টেন্ট খুজে বের করে সেগুলোকে গ্রাহকের কাছে সবার উপরে প্রকাশ করা হবে।

এর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে গুগল সার্চের বিশ্বস্ত্যতা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই আপডেটে গুগল চেষ্টা করেছে স্প্যাম কন্টেন্ট খুজে বের করে সেগুলোকে কম গুরুত্বপূর্ন করতে। এজন্য গুগলের র‍্যাঙ্কিং সিস্টেমও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনটা বোঝার সুবিধার জন্য গুগল একটি নতুন FAQ পৃষ্ঠাও যুক্ত করেছে গ্রাহকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য।

গুগল কোর আপডেট ২০২৪ একটি জটিল আপডেট, এটি সম্পূর্ণভাবে রোলআউট হতে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। নিয়মিত কোর আপডেটের তুলনায় র‍্যাঙ্কিংয়ে আরও ওঠানামার সম্ভাবনা রয়েছে এই আপডেটের মাধ্যমে, কারণ বিভিন্ন সিস্টেম যেন সম্পূর্ণভাবে আপডেট হয় এবং একে অপরকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আপডেট শেষ হলে গুগল Google Search Status Dashboard এ তা পোস্ট করবে।

গুগল কোর আপডেট -Google Search Status Dashboard

এই আপডেটের ক্ষেত্রে সঠিক নির্মাতাদের জন্য আলাদা করে নতুন কিছু করার নেই, তবে যারা ইতোমধ্যেই মানুষের জন্য আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করে আসছেন কিন্তু র‍্যাঙ্কিং পাচ্ছেন না তাদের জন্য এই আপডেটটি অনেক উপকারী হবে। আপনি ভাল কন্টেন্ট লেখার জন্য গুগলের কিছু পরামর্শ ও গাইডলাইন অনুসরন করতে পারেন “creating helpful, reliable, people-first content” এজন্য লিংকটি ক্লিক করে একবার পরে আসুন।

- Advertisement -

গুগলের নতুন স্প্যাম নীতিমালা 2024

গুগলের স্প্যাম নীতিমালার লক্ষ্য হলো সার্চের ফলাফলগুলোকে আরো বেশি সঠিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা। এবং যেসব কৌশল গুগল সার্চের মানের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে সেসব ঠেকানো। আজকে আমরা তিনটি নতুন স্প্যাম নীতির কথা জানবো যেগুলো সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কিছু খারাপ অভ্যাসের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে, যেমন – মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ডোমেইনের অপব্যবহার, ব্যাপক হারে কপি করা কন্টেন্টের অপব্যবহার, এবং সাইট রেপুটেশনের অপব্যবহার।

গুগল সকল কন্টেন্ট নির্মাতাদের পরামর্শ দিয়েছে, যে তাদের স্প্যাম নীতিমালাগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে যেন তারা এসব কৌশল ব্যবহার না করে কন্টেন্ট তৈরি করে। যেসব সাইট স্প্যাম নীতিমালা ভঙ্গ করবে সেগুলোর সার্চ র‍্যাঙ্কিং নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি সার্চের ফলাফলে আদৌ নাও দেখাতে পারে। যদি এমন স্প্যাম ম্যানুয়াল অ্যাকশনের আওতায় কেউ পড়ে, তাহলে সাইটের মালিকরা রেজিস্টার্ড Search Console অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পাবেন এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

১. মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ডোমেইনের অপব্যবহার

অনেকেই বর্তমানে এমন সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে, যে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া কোনো ডোমেইন নেম ক্রয় করে সেটা সার্চ র‌্যাঙ্কিংয়ে ভাল ফলাফল পাওয়ার আশায় কাজ করছে। তবে এটি গুগলের নীতিমালাকে ব্রেক করে কারন অনেকেই আছে যে সাইটগুলোকে ক্রয় করে সেই সাইটের ক্যাটাগড়িও পরিবর্তন করে কাজ করছে।

যেমন ধরুন – কোন একটি সরকারী সাইট যেটা অন্য কোন শর্ট প্রসেসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু এখন আর ব্যবহার হয় না। তবে, সেটা কেউ একজন ক্রয় করে তার ভাল রেপুটেশন ব্যবহার করে অনলাইনে শপিং বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করছে। এটা বর্তমানে অনেক বেশি ছড়িয়ে পরেছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া ডোমেইনের অপব্যবহার দুর্ঘটনাক্রমে হয়ে যায় না। কিছু লোক আছে যারা আশা করে সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‍্যাঙ্কিং পাওয়ার জন্য, এরকম ডোমেইনগুলো ক্রয় করে থাকেন ভাল ভিজিটর পাওয়ার জন্য। তবে কোনো পুরনো ডোমেইনকে নতুন করে ক্রয় করে আপনি যদি সঠিক উপায়ে কাজ করেন এবং তা মানুষের জন্য উপকারে আসে তাহলে কোন সমস্যা নেই।

২. ব্যাপকহারে তৈরি করা এআই কন্টেন্টের অপব্যবহার

ব্যাপকহারে কন্টেন্ট তৈরির অপব্যবহার (Scaled content abuse) বলতে এমন কেসগুলোকে বোঝায় যেখানে প্রচুর পরিমাণ পোষ্ট তৈরি হয় প্রতিদিন। মূলত সার্চের র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্রুত ইনডেক্স এবং ডিসকভারিতে চলে যাওয়ার জন্যই এমন করা হয় পাঠকের উপকার করার জন্য নয়।

- Advertisement -

এই ধরনের ক্ষতিকর অভ্যাসে সাধারণত বিপুল পরিমাণে অপ্রয়োজনীয় কন্টেন্ট তৈরি করা হয়, যেগুলোর মান খুবই নিম্ন এবং পাঠকের জন্য তেমন কোনো উপকারই বয়ে আনে না। সেটা যাই হোক না কেন – অটোমেশনের মাধ্যমে হোক, মানুষের দ্বারা হোক, কিংবা অটোমেটেড প্রসেস এবং মানুষের কাজের সংমিশ্রণে হোক।

এই নতুন নীতিটি তৈরি করা হয়েছে অটোমেটিক্যালি-জেনারেটেড কন্টেন্ট নিয়ে গুগলের পুরনো স্প্যাম নীতিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য। এতে করে যেকোনো ধরনের স্কেলড কন্টেন্ট অ্যাবিউজের প্রয়োজনে গুগল ব্যবস্থা নিতে পারবে।

AI কন্টেন্ট স্প্যাম হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে কি গুগলের নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে?

স্বয়ংক্রিয়তা (যেমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি কন্টেন্ট) ব্যবহার করে সার্চ ফলাফলের র‍্যাঙ্কিংয়ে কারসাজি করা স্প্যাম। গুগলের এই আপডেটেড নীতি আগের নীতির মতো একই নীতির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এখানে আরও জটিল ধরণের পরীক্ষা করা হবে, যেখানে ব্যাপকহারে কন্টেন্ট তৈরির পদ্ধতিগুলোকে ঠেকানোর কথা বলা হয়েছে। কখনও কখনও নিম্নমানের এসব কন্টেন্ট শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করা হয় সার্চ রেজাল্টে প্রবেশ করার জন্য। এই আপডেটেড নীতি সেই জায়গাগুলোতেও লক্ষ্য রাখছে।

এই নতুন নীতির সাথে “অটোমেটিক্যালি-জেনারেটেড কন্টেন্ট” এর বিরুদ্ধে পুরনো নীতির পার্থক্যটা কোথায়?

গুগলের এই নতুন নীতিটি মানুষকে আরও ভালো করে বোঝাতে চায় যে, প্রচুর পরিমাণে কন্টেন্ট তৈরি করা যদি শুধু সার্চ র‍্যাঙ্কিংয়ে কারসাজি করার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে সেটা ক্ষতিকারক কাজ। আর এটা যেভাবেই করা হোক, মানুষের মাধ্যমে হোক বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোক, নীতিটি উভয় ক্ষেত্রেই গুগলের নীতিকে ব্রেক করে।

৩. সাইট রেপুটেশন অ্যাবিউজ

সাইট রেপুটেশন অ্যাবিউজ (Site reputation abuse) হয় তখন, যখন কোনো থার্ড-পার্টি পেজ প্রকাশিত হয় যেখানে মূল ওয়েবসাইট থেকে প্রায় কোনো তদারকি বা সম্পৃক্ততা থাকে না। এই পাতাগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে ফার্স্ট-পার্টি সাইটটির র‍্যাঙ্কিং সিগন্যালের সুযোগ নিয়ে সার্চের র‍্যাঙ্কিংয়ে উঠার জন্য।

- Advertisement -

এই জাতীয় থার্ড-পার্টি পেজের মধ্যে থাকতে পারে স্পন্সর্ড কন্টেন্ট, বিজ্ঞাপন, পার্টনার কন্টেন্ট, বা এই ধরণের অন্য থার্ড-পার্টি পেজ যা ওয়েবসাইটটির মূল উদ্দেশ্যের সাথে প্রায়ই মেলে না, অথবা ওয়েবসাইট মালিকের তেমন কোনো তদারকি বা সম্পৃক্ততা ছাড়াই তৈরি হয়, এবং যেগুলো পাঠকদের জন্য তেমন কোনো উপকার বয়ে আনে না।

তবে গুগলের এই নতুন নীতিমালাতে সব থার্ড-পার্টি কন্টেন্টকে ভায়োলেশন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র সেগুলো যেখানে তদারকি কম থাকে এবং সার্চ র‍্যাঙ্কিংয়ে হেরফের করার উদ্দেশ্য থাকে। যেমন, অনেক জনপ্রিয় পত্রিকাতেই বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়, যেগুলো তাদের নিয়মিত পাঠকদের জন্যই লেখা হয়, মূলত সার্চ র‍্যাঙ্কিংয়ে গোলমাল করার জন্য নয়।

এসব প্রকাশনা “নেটিভ অ্যাডভার্টাইজিং” বা “অ্যাডভার্টোরিয়াল” নামেও পরিচিত, এসব কন্টেন্ট পত্রিকার নিয়মিত পাঠকদের বিভ্রান্ত করবে না যখন তারা সরাসরি পত্রিকার সাইটে অথবা গুগল সার্চ থেকে এগুলো দেখবেন। এসবকে গুগল সার্চ থেকে ব্লক করারও দরকার হয়না।

গুগলের spam policies page (স্প্যাম নীতিমালা): https://developers.google.com/search/docs/essentials/spam-policies এখানে কিছু উদাহরণ তালিকা করা আছে যেখানে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছে কোনটা সাইট রেপুটেশন অ্যাবিউজ এবং কোনটা না।

এই ধরনের কন্টেন্টকে অবশ্যই গুগল সার্চ থেকে ব্লক করা হবে যেগুলো গুগলের স্প্যাম নীতিমালার আওতায় পরে। সাইট মালিকদের এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ দেয়ার জন্য, এই নতুন নীতিটি কার্যকর হবে আশাকরা যাচ্ছে ২০২৪ সালের ৫ই মে থেকে।

- Advertisement -

উপসংহার

গুগলের এই নতুন নীতিমালা এবং স্প্যামের বিরুদ্ধে লড়াই করার সিস্টেমগুলোতে নিয়মিত আপডেট যোগ করার মূল লক্ষ্য শুধু এটাই যে পাঠকরা ভালো ও উপকারী কন্টেন্ট পাক। এর আরেকটা উদ্দেশ্য হলো যারা উপকারী কন্টেন্ট তৈরি করছে তারা সার্চে এগিয়ে থাকুক, যারা স্প্যামিং করে তাদের চেয়ে।

আপডেটের রোলআউট সম্পূর্ণ হলে গুগল Search Status Dashboard এ তা আপডেট করে দিবে। সেই সাথে আপডেট শেষ হওয়ার পরে যেকোনো নির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য একটি ফর্মও খুলে দেওয়া হবে গ্রাহকের প্রশ্ন করার জন্য।

Share This Article
Follow:
টেকপথ একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তিগত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে আপনি শিখতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউবিং, সফটওয়্যার সিকিউরিটি, গ্যাজেট তথ্য, টেক ট্রাবলশুটিং ইত্যাদি ।
Leave a comment

Leave a Reply