আজ আমরা ফিশিং লিংক চেনার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে কানেক্টেড। এবং এই অনলাইনে সম্পৃক্ত থাকার কারনেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আজ আমরা তেমনই একটি খুব গুরুত্বপূর্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। আলোচনার শুরুতেই আমরা জেনে নিব, ফিশিং লিংক কি এবং কিভাবে সহজেই একটি ফিশিং লিংক চিনতে পারি?
ফিশিং লিংক কি?
ফিশিং লিংক (Phishing) হল এক ধরনের সাইবার আক্রমণ যা বেশিরভাগ সময় মেইলের মাধ্যমে করা হয়। ছদ্মবেশী ইমেইল, টেক্সট মেসেজ, ভয়েসমেইল বা QR কোড ব্যবহার করেও ফিশিং লিংক তৈরি করা হয়।
এই আক্রমণগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অফিসের মেইল টার্গেট করেই সাধারনত করা হয়। তবে, একটি বিষয় সবসময় মাথায় রাখবেন সাধারনত ফিশিং মেইল প্রেরন করার পূর্বে হ্যাকাররা আপনার মেইলের বা আপনার কাজের সকল বিষয়গুলো মনিটরিং করে তারপর আপনাকে মেইল পাঠায়।
এজন্য হ্যাকারদের ফিশিং মেইলটি দেখতে প্রায় অরিজিনাল মেইলের মতই হয়ে থাকে, যেমন – কোন ব্যাংক থেকে একটি অনুরোধ, আপনার অফিসের কোন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে কোন তথ্য চাওয়া অথবা কোন অফার দিয়ে মেইল পাঠানো ইত্যাদি। এবং সেই লিংকে যদি আপনি না বুঝে ক্লিক করেন তাহলেই হ্যাকারের উদ্দেশ্য সফল এবং আপনার তথ্য চুরিকরা শুরু করে দিবে।
পড়ুনঃ
- ফিশিং আক্রমণ কি (Phishing Attack) এবং ফিশিং আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়?
- 7টি কৌশলে হ্যাকিং হওয়া থেকে বাঁচার উপায় জেনে নিন!
ফিশিং লিংক চেনার উপায়?
অনেক সাধারন ব্যবহারকারী আছে যারা তাদের ইনবক্সে আসা লিংক কিংবা অফারের কোনো বিজ্ঞাপন না দেখে ক্লিক করে। এজন্য সাবধান থাকা জরুরী এবং দেখে শুনে লিংকে ক্লিক করা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেই ফিশিং লিংক চেনার উপায় এবং ফিশিং সাইট লিংক কিভাবে চিনবোঃ
১। যে মেইল অ্যাড্রেস থেকে আপনার কাছে মেইল বা মেসেজ এসেছে সেটাকে যাচাই করুন। ডোমেইননাম গুগলে সার্চ করুন এবং যাচাই করুন এবং সার্চ রেজাল্ট ভালো করে চেক করুন। যদি কোনো ধরনের মিল খুঁজে না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলুন। লিংকটি ভালোভাবে চেক করুন সেই ওয়েবসাইটের ইউআরএলটিতে এইচটিটিপি ও ডোমেইন নেমের বানান ঠিক আছে কি না? ভুয়া বা ফিশিং ওয়েবসাইটের ইউআরএলে সাধারণত এই ধরনের ভুলগুলো থাকে।
২। ভুয়া বা ভুল তথ্য শনাক্তকরণের জন্য প্রথমেই দেখবেন, হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে বা যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা মেসেজটির পাশে ‘ফরওয়ার্ড’র চিহ্ন আছে কি না? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া মেসেজগুলো ফরওয়ার্ড হয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে মেসেজে হিসেবে আসে।
৩। ভুয়া লিংকে বানান ভুল অথবা অতিরিক্ত অক্ষর থাকতে পারে। যেগুলো কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। কিন্তু ওই লেখাগুলো হাইপারলিংক করা থাকায় ট্যাপ করলেই আপনি অন্য একটি পেজে ঢুকে যাবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লগ ইন পেজ অথবা ফর্ম পূরণ করতে বলে, যেখানে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর বা পাসপোর্টের নম্বর চাইতে পারে। এই লগ ইন পেজ বা ফর্ম পূরণ করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব লিংকটি থেকে বের হয়ে আসবেন।
ফিশিং এর প্রকারভেদ?
১। ইমেল ফিশিংঃ
বহুল প্রচলিত এবং বহুল ব্যবহৃত ফিশিং অ্যাটাকের নমুনা হল, ইমেলের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করা। ইমেলের মাধ্যমে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে অথবা কখনও বা ভয় দেখিয়ে গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ন একাধিক তথ্য চুরি করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
২। ম্যালওয়্যার ফিশিংঃ
ইমেল ফিশিংয়ের মতোই ফ্রডস্টাররা লিঙ্ক পাঠিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। লিঙ্কে থাকে ম্যালিশিয়াস ফাইল (অ্যাটাচমেন্ট), যা গ্রাহককে ক্লিক করতে বা ডাউনলোড করতে প্রলুব্ধ করা হয়। আর এক বার সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই গ্রাহকের সিস্টেমের অ্যাকসেস নিয়ে নেয় প্রতারকরা।
৩। স্মিশিংঃ
এই পদ্ধতিতে আবার ম্যালিশিয়াস শর্ট লিঙ্ক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কাছে প্রদান করা হয়। অ্যাকাউন্ট নোটিফিকেশন, প্রাইজ নোটিস এবং আরও অনেক কিছুর ছদ্মবেশে গ্রাহকের ফোনে পৌঁছে যায় ম্যালিশিয়াস লিঙ্ক।
৪। ভিশিংঃ
ভয়েস ফিশিং বা ভিশিং এই মুহূর্তের আর একটি ভীতিকর ফিশিং অ্যাটাক। এর সাহায্যে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও অর্গ্যানাইজেশনের এক জন কর্মচারী গ্রাহককে ফোন করে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বড়সড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর তার পরই ভয়ের বশবর্তী হয়ে নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের একাধিক জরুরি তথ্য শেয়ার করেন ব্যবহারকারীরা।
পরিশেষ কিছু কথাঃ
ইন্টারনেট জগৎ আমাদের যেমন কল্যান বয়ে এনেছে, অপরদিকে এটি আমাদের দুশ্চিন্তারও কারন। এর একটাই সমাধান নেট দুনিয়ার বাহিরে থাকা, যা বর্তমান সময়ে আসলেই কষ্টকর। যাইহোক, আমরা আজ জেনেছি ফিশিং লিংক চেনার উপায় এবং আশা করি ফিশিং লিংক সম্পর্কে এখন থেকে আমরা সকলে সচেতন থাকবো।