অফ-পেইজ এসইও: আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্কিং বাড়ানোর গোপন কৌশল!

Md. Abdur Rahman
6 Min Read
Image by vectorpouch on Freepik

অফ-পেইজ এসইও, যেটা অফ-সাইট এসইও নামেও পরিচিত, এটি আসলে কিছু অপটিমাইজেশন কৌশল যা সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেইজে (SERPs) আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্কিং উন্নত করতে পারে। তবে এই কৌশলগুলো আপনার ওয়েবসাইটের বাইরে থেকে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে অন্য ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক নেয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা, এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় আপনার সাইটের তথ্য বা লিংক শেয়ার করা।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও এর অনেকগুলো গুণ রয়েছে, আর এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অফ-পেইজ এসইও। সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ভালোভাবে র‍্যাঙ্ক করার জন্য অফ-পেইজ এসইও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে ব্যাকলিংকগুলো, কিন্তু ২০২৩ এর শেষের দিকে এক আপডেটে গুগল থেকে বলে দেয়া হয়েছে শুধু ব্যকলিংক হলেই হবে না ভাল মানের ব্যবলিংক হতে হবে।

অফ-পেইজ এসইও
Image by pch.vector on Freepik

অফ-পেইজ এসইও বনাম অন-পেইজ এসইও

  • অফ-পেইজ এসইও তখনই ঘটে যখন আপনার ওয়েবসাইটের উল্লেখ ইন্টারনেটের অন্য কোথাও পাওয়া যায়। অন্যদিকে, অন-পেইজ এসইও হলো আপনার নিজের ওয়েবসাইটের অপটিমাইজেশন করা।
  • অফ-পেইজ এসইও হলো এমন কিছু চেষ্টা করা (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর মাধ্যমে) যেন আপনার সাইটের লিঙ্ক এবং রেটিং তৈরি হয়। এতে করে আপনার সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে এবং র‍্যাঙ্কিং উন্নত হয়। মূলত অফ-পেইজ এসইও এর উপর আপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
  • অন-পেইজ এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন উপাদান অপটিমাইজ করা (যেমন কীওয়ার্ড ব্যবহার ঠিক রাখা বা ইন্টারনাল লিঙ্কিং করা), যাতে আপনি যেসব কীওয়ার্ডকে টার্গেট করছেন, সেগুলোতে আপনার ওয়েবসাইট আরও ভালো র‍্যাঙ্ক করে। অন-পেইজ এসইও সম্পূর্ণভাবে আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • অন-পেইজ এবং অফ-পেইজ এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, গুগল আপনার পাতার বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিকতা বোঝার জন্য অন-পেইজ এসইও ব্যবহার করে, অন্যদিকে আপনার ওয়েবপেজের বিশ্বাসযোগ্যতা পরিমাপ করতে অফ-পেইজ এসইও ব্যবহার করা হয়।

কেন অফ-পেইজ এসইও এত গুরুত্বপূর্ণ?

অফ-পেইজ এসইও অত্যন্ত মূল্যবান কারণ এটি সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে বোঝায় যে আপনার ওয়েবসাইটটি অন্যদের কাছে গুরুত্ব রাখে। আপনি যে লিঙ্কগুলো পান, সেগুলো প্রত্যেকটিই অন্য সোর্স বা ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যা যারা আমাদের সাইটটি সমর্থন করে।

এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের বাইরে অন্যান্য উৎসগুলো একধরনের টাই-ব্রেকার হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইটের অন-পেইজ এসইও প্রায় সমান মানের, সেখানে সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বুঝতে পারে যে সার্চ রেজাল্ট পেজে (SERP) কোন ওয়েবসাইটগুলোর র‍্যাঙ্কিং উপরে বসানো উচিত।

উদাহরণস্বরূপ, বিবেচনা করুন প্রায় একই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে তৈরি দুটি ওয়েডিং ওয়েবসাইট। এখন, কোন সাইটটি সার্চে বেশি ভালোভাবে র‍্যাঙ্ক করবে?

  • যদি দুটো সাইটই একই রকম অন-পেইজ এসইও কলাকৌশল ব্যবহার করে, তাহলে অফ-পেইজ এসইও নির্দেশকগুলোই ঠিক করে দিতে পারে যে কোন সাইটটি সার্চ রেজাল্টে এগিয়ে থাকবে।
  • গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো বিভিন্ন অফ-পেইজ এসইও বিষয়ের হিসাব রাখে, যেমন একটি ওয়েবসাইটে কতগুলো ব্যাকলিঙ্ক আছে এবং তাদের গুণগত মান কেমন।
  • ধরুন ওয়েডিং ওয়েবসাইট দুটির মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে অনেক বেশি ব্যাকলিঙ্ক পেয়েছে, অন্যদিকে অপর ওয়েবসাইটটি একটিও অনলাইন উল্লেখ পায়নি। স্বাভাবিকভাবেই যে সাইটের বেশি ব্যাকলিঙ্ক আছে (এবং অনলাইন সুনামও ভালো), সেটাই র‍্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থাকবে।
  • অনেকগুলো অফ-পেইজ এবং অন-পেইজ এসইও বিষয়কে কাজে লাগিয়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন কোন পেজগুলো ব্যবহারকারীদের সার্চের সাথে সবচেয়ে বেশি মিলে যায়। তারপর তারা সেই অনুযায়ী সার্চ রেজাল্ট দেখায়।
  • সবশেষে একটা কথা মনে রাখবেন— যে ওয়েবপেজের অফ-সাইট অপটিমাইজেশন ঠিকঠাক করা হয়নি, সেটা অনেকটা নিমন্ত্রণপত্র ছাড়া বিয়ের মতোই।

অফ-পেইজ এসইও করতে ৩ প্রকার লিংক করা হয়

অফ-পেইজ এসইও-এর ক্ষেত্রে লিংকগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকলিংক তৈরি বা অর্জন শুরু করার আগে, বিভিন্ন ধরণের লিংকগুলি বুঝতে হবে। সেই সাথে, লিংকের গুণগত মানও জানা জরুরী, কারণ সেগুলোই আপনার ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।

লিংক মূলত তিন প্রকার:

  • ন্যাচারাল লিংক (Natural Links): এই ধরনের লিংক আপনার ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। আপনার টিমকে এই লিংক অর্জনের জন্য কোনো প্রচেষ্টা করতে হয় না। যিনি ব্লগ বা কনটেন্ট লিখছেন, সেই নিজের থেকেই আপনার কনটেন্টের লিংক যুক্ত করে দেয়। হয়তো তারা আপনার ব্র্যান্ডকে অনুসরণ করে বা অনুসন্ধানের মাধ্যমে আপনার কনটেন্ট পেয়েছে। যাই হোক, তারা আপনার কনটেন্টকে মূল্যবান এবং উল্লেখযোগ্য মনে করেই লিংক করেছে।
  • বিল্ট লিংক (Built Links): বিল্ট লিংকগুলো বিভিন্ন উপায়ে অর্জন করা হয়ে থাকে। ওয়েবমাস্টার, প্রকাশক বা সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আপনার টিম এই লিংকগুলির জন্য কাজ করে। কোনো কনটেন্টকে প্রচারের জন্য আপনি হয়তো বিজ্ঞাপন ব্যবহারও করতে পারেন, যা আপনার কনটেন্টটিকে পাঠকদের কাছে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। এই ধরনের লিংক তৈরি করা হলেও, মনে রাখতে হবে, পাঠকের জন্য মূল্যবান কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
  • ক্রিয়েটেড লিংক (Created Links): ডিরেক্টরি, ফোরাম বা প্রেস রিলিজ-এর মতো প্ল্যাটফর্মে আপনি নিজেই যে লিংকগুলো তৈরি করেন, সেগুলোই ক্রিয়েটেড লিংক। এই ধরনের লিংকগুলো তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনোরকম বহিরাগত প্রচেষ্টা থাকে না। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ধরণের লিংক তৈরিকে ‘ব্ল্যাক-হ্যাট এসইও’ কৌশল হিসেবে গণ্য করে, তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

যখনই লিংক তৈরি করবেন, ন্যাচারাল বা বিল্ট লিংকের ওপর বেশি জোর দেওয়ার চেষ্টা করুন।

আপনি যদি Ubersuggest, Ahrefs, SEMrush ইত্যাদি টুলগুলো ব্যবহার করেন, তবে একটি ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া সম্ভাব্য লিংকের মূল্য বুঝতে পারবেন। এবং সবগুলো লিংক একসাথে দেখতে পারবেন।

পরিশেষে, আপনি যদি একজন এসইও শেখার আগ্রহী ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তাহলে বলবো সাইটটিকে স্প্যাম ব্যাকলিংক থেকে মুক্ত করেুন। অযথা স্প্যাপ ব্যাংকলিংক ক্রয় করে কোন উপকার নেই।

তাই সঠিকভাবে অফ পেইজ এসইও করুন এবং সাইটের গ্রথ বৃদ্ধি করুন।

Share This Article
Md. Abdur Rahman
By Md. Abdur Rahman Founder & Editor
Follow:
আমি একজন প্রযুক্তি প্রেমী। সবসময় নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ও শিখতে আগ্রহী। এই সেক্টরে আমার অভিজ্ঞতা প্রায় ১০+ বছর। টেকপথ আমার একটি স্বপ্ন যাত্রার নাম। প্লাটফর্মটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দ্যেশ্য সহজ ভাষায় প্রযুক্তি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। এজন্য সকলের শুভকামনা আশা করি। ধন্যবাদ! নিজে পড়ুুন ও অন্যকে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দিন।
Leave a comment

Leave a Reply