ভিডিও এডিটিং করে আয় বছরে কোটি টাকা শুনতে অবাক লাগলেও এটা সম্ভব করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের এক যুবক রাফায়েত রাকিব। সম্প্রতি তাদের এক ইউটিউব আড্ডায় এটা প্রকাশ করেছে সে নিজেই। আসলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়; আপনি যদি কোন কাজে ডেডিকেটেডভাবে লেগে থাকেন তাহলে সফলতা আপনার আসবেই।
অনলাইন মার্কেটে আপনি যদি একজন দক্ষ ব্যাক্তি হয়ে উঠতে চান তাহলে আপনার মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু গুনাবলি থাকতে হবে যা আপনার সফলতাকে আরো সহজ করে তুলবে। সেই গুনাবলিগুলো হলো- ধৈর্যশীল, কর্মঠ ও নতুন উদ্ভাবন ক্ষমতা। দেখুন, বিশ্ব এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে তাই আপনাকেও এই পরিবর্তনের হাওয়া গায়ে মাখতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
যাইহোক, আপনাদের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তাহলে চলুন শুরু করা যাক। আমাদের আজকের এই পর্বে আমরা ভিডিও এডিটিং নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো যে, কিভাবে আপনি একজন দক্ষ ভিডিও এডিটর হয়ে উঠতে পারেন এবং আপনার পরবর্তি স্টেপগুলো কি হওয়া উচিত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ভিডিও এডিটিং কি?
আলোচনা শুরু করার আগেই আমরা জেনে নিব যে, ভিডিও এডিটিং করে ইনকাম করে এই ভিডিও এডিটিং আসলে কি?
কোন একটা আনপ্রডাকশন বা RAW ভিডিওকে বিভিন্ন টেক্স, এনিমেশন, ভয়েস, ভিএফএক্স সংযোজন করে যখন একটি ভিডিওকে নান্দনিক ও রুচিশীল করা হয় তখন এই কাজটিকে বলা হয় ভিডিও এডিটিং, আর যে বা যারা এই কাজগুলো করে থাকে তাদেরকে বলা হয় ভিডিও এডিটর।
বর্তমান অনলাইন জগতে ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা অনেক অনেক বেশি। আমরা প্রতিদিন প্রত্যেকে প্রায় ১৫ মিনিট থেকে শুরু করে ৬০ মিনিট+ ভিডিও অনলাইনে বা অফলাইনে বা টিভিতে দেখে থাকি। এই ভিডিওগুলো আমাদের কাছে প্রেজেন্টেবল করে তোলার কাজটি এই ভিডিও এডিটরেরাই করে থাকে। এবং এই কাজের পারিশ্রমিকও অনেক বেশি পাওয়া যায় তাইতো ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে এর চাহিদা দিন-দিন আরো বেড়েই চলেছে।
আরো পড়ুনঃ
- ফ্রিল্যান্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ: কেন ফ্রিল্যান্সিং আপনার ক্যারিয়ারের সেরা পদক্ষেপ হতে পারে?-টেকপথ.কম
- একজন ছাত্র হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো 2024- টেকপথ.কম
ভিডিও এডিটিং করে আয় করা কিছু সফল মানুষ
ভিডিও এডিটিং করে মাসে ১ হাজার ডলার ইনকাম করার সংখ্যা অনেক আছে। তবে, এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রমও দেখা যায় যারা এই প্রফেশনটাকে বিজনেসে রুপান্তর করেছে, এবং যারা বছরে লাখ লাখ ডলার ইনকাম করছে যেমন- আমাদের বাংলাদেশের রাফায়াত রাকিভ ভাই। তিনি ইতিমধ্যে ৩টি এজেন্সি বিজনেস রান করেছেন তার এই সফলতার মাধ্যমে।
এখানে আসলে তার, ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইলের মাধ্যমে যে ক্লাইন্টগুলো আসে তার হিসাব দেওয়া আছে। কিন্তু তার এজেন্সি আর্নিং এখানে প্রকাশিত নয় সেজন্য অনুমান করা যায় যে, সে বছরে কোটি টাকা+ ভিডিও এডিটিং করে আয় করছেন এই ফিল্ড থেকে। কারন সে এক ইউটিউব পোডকাষ্ট শোতে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছিলেন যে, ১ বছরে ভিডিও এডিটিং করে আয় করেছেন কোটি টাকা।
এছাড়াও, এমন আরো অনেক বাংলাদেশি ভিডিও এডিটর রয়েছে, যারা ক্যামেরার পেছনে থেকেও বছরে ভিডিও এডিটিং করে ইনকাম করছেন কোটি টাকা। তাহলে চলুন এমন কিছু প্রফাইল দেখে আসি।
আপনি যদি আপওয়ার্কে গিয়ে ভিডিও এডিটিং লিখে সার্চ করেন এবং বাংলাদেশ লোকেশন সিলেক্ট করেন তাহলে এমন শত শত ফ্রিল্যান্সার দেখতে পাবেন। যাইহোক, আমাদের এখান আর্নিং দেখানোটা মূল উদ্যেশ্য না। আমাদের উদ্যেশ্য এখনো অনেকে আছেন যারা এই ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে ঠিক ভাল চোখে দেখেন না বা বিশ্বাস করতে চান না যে আসলেই অনলাইনে আয় করা সম্ভব।
ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব?
এখন আসি আমরা মূল আলোচনায়- ভিডিও এডিটিং কিভাবে শিখব। আসলে অনলাইনে আপনাকে ভিডিও এডিটিং করে আয় করতে হলে আপনাকে কয়েকটি বিষয় খুব কঠোরভাবে মেইনটেইন করতে হবে, যেটা সকলে পারে না। যাদের আজ আপনারা সফল হিসেবে দেখছেন, তারাও এই কঠোর পরীক্ষা দিয়েই সামনে এগিয়ে গিয়েছে।
কি কঠোর পরীক্ষার কথা শুনে ভয় পাচ্ছেন? ভয় নেই! আমি কোন সিনেমার অগ্নি-পরীক্ষা দিতে বলবো না!
আসলে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনাকে আগে বুঝতে হবে যে আপনি কোন বিষয়ে ফিট এবং কোন বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী? একজন ভিডিও এডিটিং করে আয় করছেন কোটি টাকা এমন নিউজ শুনে যদি আপনি এই ফিল্ডে আসেন; তাহলে বলবো আপনি আর সামনে না এগিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। আসলে আপনি কি পারবেন এই কাজটিতে ডেডিকেটেডভাবে ৬ মাস সময় দিতে। এই ৬ মাসে কোন আউটপুটের আশা করবেন না।
যদি আপনি রাজি থাকেন তাহলে এই ফিল্ডে আসুন না হয় অন্য ফিল্ডের জন্য চেষ্টা করুন!
এখন চলুন কিভাবে ভিডিও এডিটিং শিখবেন জেনে নেই।
প্রথমেই একটি কথা দিয়ে শুরু করি, “ইনকাম করতে হলে আপনাকে খরচ করতেই হবে”। সেটা কোন কোম্পানিতে টাকা ইনভেস্ট করে নয় নিজের উপর স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য খরচ করতে হবে। এটা কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। অনেকেই মনে করে যে, আমি ইউটিউব ভিডিও দেখে ভিডিও এডিটিং শিখে নিব বা এক্সপার্ট হয়ে যাবো। এটা আপনার ভুল ধারনা।
কারন, ইউটিউবে কোন বিষয়ই আপনি সাজানো বা সিরিয়াল মেইনটেইন করে পাবেন না। কারন প্রধান টেকনিক তারা কখনো ফ্রি শেয়ার করবে না। এর জন্য আপনাকে পে করতেই হবে। বাংলাদেশে এমন অনেক ট্রেনিং প্লাটফর্ম রয়েছে যারা প্রফেশনাল মানের ভিডিও এডিটিং কোর্স করায়। অবশ্য ভাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে শিখতে গেলে আপনাকে একটু বেশি বাজেট রাখতে হবে।
ভিডিও এডিটিং শেখার জন্য জনপ্রিয় যে টুলসগুলো, যেমন- Adobe Premiere Pro, Adobe After Effects, Adobe Audition ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে কিছু সহজ টুলস যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ভিডিও এডিটিং শিখতে পারেন তবে এটা প্রফেশনাল মানের নয়, যেমন- Camtasia, Wondershare X, Creator Studio Pro ইত্যাতি।
নিচে আমরা বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের লিংক প্রদান করছিঃ
- Coactive IT Institute: Professional Video Editing
- 10 Minute School: Video Editing with Premiere Pro
- BITM Basis: Professional Video Editing
আমাদের সাথে উপরের দেওয়া লিংকের কোন কোম্পানির সাথে চুক্তি নেই। সুতরাই কোর্সে ভর্তি হওয়ার পূর্বে অবশ্যই কোর্সের কোয়ালিটি ও ট্রেনার পরিচিতি জেনে নিবেন। কারন একজন ভাল ট্রেইনারই পারে আপনাকে সঠিক গাইডলাইন দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে জেতে।
এছাড়াও, আপনি কোর্সের পাশাপাশি অনলাইনে ইউটিউবে ভিডিও এডিটিং শিখতে পারেন। কারন ট্রেনিং করলে আপনাকে স্টেপ-বাই-স্টেপ সম্পূর্ন ধাপ আলোচনা করা হবে। আমরা পরবর্তী আরেকটি আর্টিকেলে ভিডিও এডিটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যে কিভাবে একদম জিরো থেকে শুরু করবেন, বা কিভাবে একটি সঠিক গাইডলাইন পেতে পারেন এবং কি কি সফটওয়্যার ব্যবহার শিখতে হবে।
তাহলে, সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি “ভিডিও এডিটিং করে আয়” পর্বটি। সকলের দিনটি শুভ হোক এবং সামনে চলার পথটি অনেক সহজ হোক। আল্লাহ্ হাফেজ!
কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে ভুলবেন না!