প্রায়ই একটি প্রশ্ন অনেকের মুখে শুনে থাকি যে, বিনামূল্যে ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়ানোর উপায় কী? একটি ওয়েবসাইটের সফলতা নির্ধারণের জন্য ট্রাফিককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়ে থাকে। অবশ্য যে কেউ একটি ব্যক্তিগত শখের থেকেও একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে। কিন্ত তার আলটিমেট লক্ষ্য থাকে তার সাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি করা। এজন্য ওয়েবসাইট ট্রাফিক খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি নতুন সাইটের জন্য।
আজ আমরা মূলত একটি ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধির সকল কৌশলগত দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আশা করি পোষ্টটি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে। চলুন শুরু করা যাক –
ওয়েবসাইট ট্রাফিক কি?
ওয়েবসাইট ট্রাফিক বলতে একটি ওয়েবসাইটের ভিজিটরকে বোঝায় যা অর্গানিক কিংবা মার্কেটিং দুই ভাবেই হতে পারে। ওয়েব ট্র্যাফিক পরিমাপ করা হয় ভিজিটের মাধ্যমে যাকে কখনও কখনও “সেশন” বলা হয় এবং এটি দর্শকদের আকর্ষণ করার জন্য একটি অনলাইন ব্যবসার কার্যকারিতা পরিমাপ করার একটি সাধারণ উপায়।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক একটি ওয়েবসাইট পরিদর্শন ব্যবহারকারীদের ভলিউম বোঝায়। কতজন লোক একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করবে তা নির্ভর করবে ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য, দর্শকদের নিজস্ব লক্ষ্য এবং তারা যেভাবে সাইটটি আবিষ্কার করেছে তার উপর।
বিনামূল্যে ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়ানোর উপায় কী?
বিনামূল্যে ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়ানোর উপায় জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং নিচের দেওয়া গাইডলাইনগুলো অনুসরন করুন। আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার সফল করার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে ট্রাফিক বাড়ানো। আর এর জন্য আপনাকে সাইটটির সঠিক এসইও করতে হবে।
আপনি ওয়েবসাইটে যত বেশি ট্রাফিক বাড়াতে পারবেন ততো বেশি অ্যাড ভিউ হবে, ক্লিক রেট বাড়বে, লিড জেনারেট হবে এবং আপনার ইনকামও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ওয়েবসাইট ট্রাফিক বা ভিজিটর বাড়ানোর উপায় কি? চলুন জেনে নেই ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর বাড়ানোর উপায়।
১। কিওয়ার্ড রিসার্চ
গুগলে আপনার যদি শত শত আর্টিকেল র্যাংক করে যার সার্চ ভ্যালু নেই অর্থাৎ এসব টপিক নিয়ে গুগলে লোকজন সার্চ করে না। তাহলে আপনি ট্রাফিক পাওয়ার আশা ছেড়েই দিতে পারেন। অন্যদিকে আপনি যদি এমন ৫ থেকে ১০ টা আর্টিকেল গুগলে র্যাংক করাতে পারেন যেগুলো নিয়মিত গুগলে প্রচুর সার্চ করা হয়, তাহলে কিন্তু ওয়েবসাইটে বেশ ভাল পরিমাণ ট্রাফিক নিয়ে আসা সম্ভব।
ব্লগে ট্রাফিক বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে Keyword Analysis or Research এ হতে হবে দক্ষ। অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো কিওয়ার্ড বেছে নিতে হবে। ভালো কিওয়ার্ড বলতে হাই ভলিউম এর কিওয়ার্ড হতে হবে। এরপর আপনি ব্লগে কন্টেন্ট লিখেন। ব্যাস, আপনার কাজ ৫০% হয়ে গেল। যেসব Keyword মানুষ বেশি সার্চ দিয়ে দেখে সেই কিওয়ার্ড এর ওপর কন্টেন্ট লিখুন। দেখবেন আপনার ব্লগে প্রচুর ট্রাফিক আসা শুরু হয়ে গেছে।
২। রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড এড করুন
কিওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় সম্পর্কিত কিওয়ার্ড বাছাই করে নিতে হবে। যেমনঃ আমি যদি কিওয়ার্ড রিসার্চ কি, এই টপিক নিয়ে আর্টিকেল লিখতে চাই, তাহলে আমার জন্য রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড হতে পারে জনপ্রিয় কিওয়ার্ড রিসার্চ টুলস, ফ্রি কিওয়ার্ড রিসার্চ টুলস, ইত্যাদি।
যদি আর্টিকেলটিতে সঠিকভাবে এসইও অপ্টিমাইজ করে রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড যুক্ত করতে পারি এবং তা র্যাংক করে, তাহলে কিওয়ার্ড রিসার্চ কি, এই কিওয়ার্ড এর পাশাপাশি রিলেটেড কিওয়ার্ডগুলোর জন্যও কিছু ভিজিটর এক্সট্রা পেয়ে যাব।
৩। হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট
আপনার কন্টেন্ট যদি ভাল হয়, তাহলে ডোমেইন অথরিটি, ব্যাকলিংক, অফপেজ এসইও করা না থাকলেও র্যাংক করার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু, সবকিছু থাকার পরেও যদি কন্টেন্ট ভাল না হয়, কোন লাভ নেই। গুগলে র্যাংক করতে পারবেন না। অর্থাৎ গুগল আপনার সাইটে ভিজিটর পাঠাবে না।
তাই, অবশ্যই ভালো মানের কন্টেন্ট লিখতে হবে। আপনার কন্টেন্ট যদি ভাল হয় আপনি ব্লগিং সেক্টরে শক্ত ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। আপনার কন্টেন্টের First impression-ই ব্যবহারকারীকে আপনার কন্টেন্ট পড়তে উৎসাহিত করবে। এই মনোভাব নিয়ে হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট লিখুন, দেখবেন সাইটে ট্রাফিক অটোমেটিক বাড়তে থাকবে।
৪। গেস্ট আর্টিকেল লিখুন
ব্লগে কাঙ্খিত ট্রাফিক আনতে Guest post এর বিকল্প নেই। যখন অন্য কারও ওয়েবসাইটে লিখা হয় তখন তার কন্টেন্টকে Guest post বলে। গেস্ট পোস্ট করলে ব্যাকলিংক নেওয়া সহজ হয়। আপনার ডোমেইনের অথোরিটি স্কোর বাড়াতে চাইলে এবং আপনার ওয়েবসাইটের Rank গুগল সার্চ রেজাল্টে টপ পজিশনে নিতে চাইলে আপনাকে যথার্থ ভাবে Link building করতে হবে।
আর এই লিংক বিল্ডিং করার সবচেয়ে ভালো টেকনিক হলো Guest post করা।
ব্যাকলিংক কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মনে করুন, আমরা দুজনই একই বিষয়ের উপর হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল লিখলাম এবং দুজনের এসইও স্কোরই ৯০।
কিন্তু আপনি একটি শক্তিশালী ব্যাকলিংক পেয়ে গেলেন, এখন গুগল আপনার কন্টেন্টকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে আমার চেয়ে আপনার কন্টেন্টকে ভালো র্যাংক দিবে। বুঝতেই পারছেন, ভাল র্যাংক মানে ওয়েবসাইটে আরো বেশি ট্রাফিক বাড়ানোর সুযোগ! এজন্য, আপনার সাইটের সাথে সম্পর্কিত বা প্রতিদ্বন্দ্বী সাইটগুলোতে গেস্ট আর্টিকেল সাবমিট করুন। বিনিময়ে আপনি তাদের কাছ থেকে ব্যাকলিংক পেয়ে যাবেন।
সাইট বাছাই করার সময় অবশ্যই আপনার নিশ এর সাথে সম্পর্কিত সাইট বাছাই করবেন। আপনার নিশ এর সাথে সম্পর্কিত সাইট থেকে পাওয়া ব্যাকলিংক আপনার কন্টেন্টকে আরও শক্তিশালী করবে।
৫। সোশ্যাল মিডিয়া একটিভ রাখুন
একটি আর্টিকেল লেখার পর আমরা অনেকসময় পরবর্তীতে আর্টিকেলটির কথা ভুলে যাই। অন্যদিকে, অন্যান্য সাইট একই বিষয়ে আপডেটেড আর্টিকেল প্রকাশ করায় আমাদের প্রকাশনার র্যাংক নেমে যেতে শুরু করে।
এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন। নিয়মিত বিরতিতে পোস্টগুলো শেয়ার করার চেষ্টা করুন। এতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ট্রাফিক পাওয়ার পাশাপাশি কিছু ফ্রি ব্যাকলিংক পেয়ে যাবেন যা গুগল আপনার পোস্টকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বাধ্য করবে এবং র্যাংক ধরে রাখতে সাহায্য করবে। যেকোন ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে এটি প্রমানিত।
৬। জনপ্রিয় বিষয়বস্তু তৈরি করুন
শুধুমাত্র কন্টেন্ট পোস্ট করাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। আপনাকে অবশ্যই এমন বিষয়বস্তু তৈরি করতে হবে যা স্মরণীয় এবং ভিজিটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
কেননা ব্লগিংয়ে ভিজিটরদের জন্য দরকারী এবং স্মরণীয় বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক বাড়ানো অনেক সহজ ও শীর্ষ উপায়গুলির মধ্যে একটি। সাধারণত ভিজিটরেরা তাদের প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং সঠিক উত্তর খুঁজতে গুগল ব্যবহার করে এবং সেই উত্তরগুলি প্রদান করার যোগ্যতা আপনার কনটেন্টে থাকতে হবে।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে প্রকৃতপক্ষে, ব্লগের বিষয়বস্তু সম্বলিত ওয়েবসাইটগুলি ৪৩৪% বেশি সার্চ ইঞ্জিন-ইনডেক্সকৃত কাভারেজ প্রদান করে৷ সুতরাং বুঝতেই পারছেন কনটেন্ট বানাতে হবে প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়।
৭। গেস্ট পোস্ট লিখুন
অন্যান্য ওয়েবসাইটের জন্য গেস্ট পোস্ট লিখা, আপনার সাইটের জন্য ব্যাকলিংক তৈরি করা, রেফারেল ট্র্যাফিক বাড়ানো এবং সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের র্যাঙ্কিং বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়। পিচ করার জন্য সবসময় আপনার সাইট ও সাইটের কন্টেন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলি ভালোভাবে গবেষণা করা উচিত।
এটা রেফারেল ট্রাফিক বাড়াবে আর সেইসাথে ইনকাম জেনারেট করা আরো দ্রুত করবে।গেস্ট পোস্ট করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি একটি ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু দেখে এটার কোয়ালিটি নিশ্চিত হয়ে নিন। পাশাপাশি এটার ডোমেন অথোরিটি পরীক্ষা করে তাদের অতিথি পোস্টিং নির্দেশিকা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
আপনার কাছে এটা উপযুক্ত মনে হলে সাইটের এডমিন বা প্রকাশককে জিজ্ঞাসা করুন যে তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার পোস্টটি প্রচার করবে এবং তারা আপনাকে ট্যাগ করবে কিনা। যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে আপনি এগিয়ে যান ও কিছু গেস্ট পোস্ট করুন, যা আপনার রেফারেল ভিজিটর এনে দেবার পাশাপাশি কিছু স্ট্রং ব্যাকলিংক এনে দেবে।
৮। ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন ব্যবহার করুন
পেইড সার্চ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিসপ্লে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক বাড়ানো একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। যদিও প্রতিটি বিকল্প উপায়েই কিছু উত্থান পতন থাকে। যেমন এখানে অনেক ইউজার হয়তোবা আপনার বিজ্ঞাপনকে ব্লক করে দিলেও দিতে পারে। তবে এর মাঝেও একটা বিশেষ অংশ আপনার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হতে পারে।
একটা ভালো ব্যাপার হলো এসব বিজ্ঞাপনে যারা ক্লিক করে তাদের মধ্যে অনেকেই রিপিটেড ইউজার হিসেবে আপনার সাইটে বারবার ফিরে আসতে পারে বলে প্রমান পাওয়া যায়। এখানে লক্ষ্যণীয় হলো, পিপিসি (পে-পার-ক্লিক) তে আপনি যেমন ভিজিটর চান, যাদেরকে লক্ষ্য করে কনটেন্ট অপটিমাইজ করে তৈরি করেছেন তাদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি একটা বড় পাঠক বা ভিজিটর গোষ্ঠী তৈরি করবে।
উপসংহার
ওয়েবসাইট থেকে যদি টাকা উপার্জন করতে চান তাহলে প্রধান শর্ত হলো ভিজিটর বা ট্রাফিক। আপনার ওয়েবসাইট ট্রাফিক যত বাড়বে ইনকাম তত বৃদ্ধি পাবে। তবে, অবশ্যই ট্রাফিকগুলো অরগানিক ট্রাফিক হতে হবে। আশাকরি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে কিভাবে বিভিন্ন উপায়ে ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি করা যায়।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়ানোর বিষয়ে গুগলের কিছু মতামত আছে জানতে চাইলে ভিজিট করে আসুন।
ভিজিটরকে একটি ওয়েবসাইটের প্রাণ বললেও ভুল হবে না। কারন কোন ভিজিটর ছাড়া একটি ওয়েবসাইট অচল। তাই ওয়েবসাইট চালানোর ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনা। এ জন্য কিছু বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, কোনো সাইটে ভিজিটর আনা তেমন সহজ না আবার জানলে কঠিনও কোন বিষয় নয়।