আজ আমি আপনাদের দেখাব কিভাবে 2024 সালে আপনার ইউটিউবে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করবেন এবং আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজেশন করবেন। এই ধাপগুলো আমরা ইউটিউবের সকল সফল ইউটিউবারের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করেছি। আমাদের সাথেই থাকুন –
প্রথমেই একটি বিষয় ক্লিয়ার করি, অনেকেই মনে করেন ইউটিউব চ্যানেল শুরু করা এখন আর সম্ভব না, কারণ “সব মিলিয়নেয়ার ইতিমধ্যেই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তৈরি হয়ে গেছে।” একটি কথা মনে রাখবেন রাতারাতি ইউটিউব তারকা হয়ে ওঠাটা দুর্লভ, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি চ্যানেলে বড় কিছু করতে পারবেন না — শুধু সময় লাগবে।
আজ আমরা এমন ৮টি গোপন রহস্য নিয়ে কথা বলবো যা আপনার ইউটিউব ভিডিও তৈরির যাত্রাটি আরো সুগম করবে। তাহলে আসুন আমরা ভিতরে প্রবেশ করিঃ
ইউটিউবে জনপ্রিয় হওয়ার ৮টি গোপন রহস্য
ধাপ #1: ব্যবহার না করা ভিডিও কীওয়ার্ড খুঁজুন
ধাপ #2: সবথেকে বেশি অডিয়েন্স কখন থাকে সেটা বুঝে ভিডিও আপলোড করুন
ধাপ #3: আপনার YouTube ভিডিও টাইটেল, ডেসক্রিপশন অপ্টিমাইজ করুন
ধাপ # 4: আলাদা ধরনের থাম্বনেইল ব্যবহার করুন
ধাপ #5: প্লেলিস্ট তৈরি করুন এবং শেয়ার করুন
ধাপ #6: আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার দর্শকদের কাছে ভিডিও প্রচার করুন
ধাপ #7: দর্শকদের গ্রাহকে পরিণত করুন
বোনাস ধাপ: Google অনুসন্ধানে ভিডিও র্যাঙ্ক করুন
ধাপ #1: ব্যবহার না করা ভিডিও কীওয়ার্ড খুঁজুন
একটি কথা ভেবে দেখুনতো, আপনি যদি একটি ভিডিওর ভিউ মিলিয়ন দেখে সেই ভিডিও তৈরি করতে যান তাহলে কি আপনি ভিউ পাবেন। পাবেন না!
কারন ইউটিউবের অ্যালগরিদম অনুসারে যে ভিডিও মানুষ সবথেকে বেশি দেখেছে এবং নতুন টপিক সেগুলো সবার উপরে থাকে এবং ইউটিউব নিজে থেকে অন্যকে সাজেস্ট করে। এজন্য আপনাকে কিছু কৌশল ব্যবহার করতে হবে।
আপনাকে এমন সব কিওয়ার্ড খুজে বের করতে হবে যেগুলো এখনো কারো হাতে পৌছায় না। এখন অনেকেই ইউটিউবকে একটি প্রফেশনাল প্লাটফর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাই, অন্যের কন্টেন্ট দেখে ভিডিও না বানিয়ে নিজে কিছু নতুন কিওয়ার্ড খুজে বের করুন।
কিওয়ার্ড খুজে নিতে আপনি Keyword Tool ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ #2: সবথেকে বেশি অডিয়েন্স কখন থাকে সেটা বুঝে ভিডিও আপলোড করুন
YouTube-এর প্রধান এবং #1 লক্ষ্য হল মানুষকে YouTube-এ ধরে রাখা। কারন যতক্ষন আপনাকে ইউটিউবে রাখতে পারবে তাদের ইনকামও বেশি হবে। তাই সর্বশেষে, লোকেরা YouTube-এ যত বেশি সময় ব্যয় করে, তারা বিজ্ঞাপন থেকে তত বেশি অর্থ উপার্জন করে এবং সেই কারণেই YouTube-এর অ্যালগরিদম দেখার সময়কে অনেক বেশি জোর দেয়। ওয়াচ টাইম শুনেননি? এখানে একটি সহজ ব্যাখ্যা:
Watch time is measured in cumulative minutes watched, and each video uploaded – as well as every channel on YouTube – is “ranked” by watch time. Channels and videos with higher watch times are likely to show up higher in search results and recommendations.
YouTube Creator Academy
এই কথাটির সারসংক্ষেপ যদি বলি, তাহলে আপনার ভিডিওর লাইভ ওয়াচটাইম যত বেশি হবে তার রেংঙ্ক তত বেশি দ্রুত বাড়বে। তারমানে, আপনার ভিডিও আপলোডের পরে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে এর ওয়াচটাইম বা ভিডিও পারফরমেন্ট।
প্রতি সেকেন্ডে লাখ লাখ ভিডিও আপলোড হয় ইউটিউবে তাই আপনি যদি ভিডিও ছাড়ার ৩০মিনিটে আপনার সাবস্ক্রাইবারদের মধ্যে আকর্ষন করাতে না পারেন আপনার ভিডিওটির তাহলে ৩০মিনিট বা ১ ঘন্টা পরে তো তাদের ড্যাশবোর্ড থেকে ভিডিও অনেক নিচে চলে যাবে।
তাই ভিডিও আপলোডের সাথে সাথে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ার সাথেও শেয়ার করুন। এবং বোঝার চেষ্টা করুন আপনার চ্যানেলের ভিডিও ওয়াচটাইম কোন সময়ে সবথেকে বেশি থাকে।
ধাপ #3: আপনার YouTube ভিডিও টাইটেল, ডেসক্রিপশন অপ্টিমাইজ করুন
এসইও যদি আপনি কিছুটা না পারেন তাহলে বর্তমানে ইউটিউবে আপনার যাত্রাটি অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে। কারন প্রথমেই বললাম যে, এখন অনেকেই আছে এটা প্রফেশানালি শুরু করেছে যারা অনেক বেশি ভিডিও এর উপর রিসার্চ করে। তাই তাদের সাথে কম্পিট করাটা কঠিন।
এজন্য আপনাকে আপনার ভিডিও এর টাইটেল ও ডেসক্রিপশনের দিকে নজর দিতে হবে। দেখুন অনেকেই প্রশ্ন করে যে, অনেক সেলিব্রেটি আছে যারা কিছুই লেখে না কিন্তু মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। এর একটাই কারন তারা সেলিব্রেটি।
শাহরুখ খানের যদি ঠান্ডা লাগে এবং জ্বর হয় সেটা একটি ব্রেকিং নিউজ। যা দেখতে মানুষ নিজে থেকেই গুগলে সার্চ করবে কিন্তু আমি আপনি যদি পা ভেঙ্গে পরেও থাকি সেটা একটি অ্যাক্সিডেন্ট। কিছু মনে করবেন না জাস্ট ফান”
এসইও কে এখন ম্যাজিক টুলসও বলা যায়
যাইহোক, জানার এবং বোঝার কোন শেষ নেই। তাই, বেশি জানতে হলে বেশি শিখতে হবে। জানলেই বেশি আর্নিং করতে পারবেন।
ধাপ # 4: আলাদা ধরনের থাম্বনেইল ব্যবহার করুন
থাম্বনেইল একটি বড় ভূমিকা রাখে আপনার ভিডিওটি ক্লিক করার জন্য। এমনও ইউটিউবার আছে যারা একটি থাম্বনেইল তৈরি করতে ১/২দিন সময় লাগায়। আর আমরাতো মাত্র ২০ মিনিটে একটি থাম্বনেইল তৈরি করে ফেলি।
সকলের থেকে যদি আপনার থাম্বনেইল কিছুটা আলাদা না হয় তাহলে আপনার ভিডিও ক্লিক পড়বে খুবই কম। কারন একটি জনপ্রিয় চ্যানেলকে তখনই পিছনে ফেলতে পারবেন যখন আপনার কৌশল অন্যকে হার মানাবে।
আমি বলবো আপনি থাম্বনেইল বানাতে কিছুটা সময় নিন এবং নতুন নতুন ভিডিওর জন্য নতুন নতুন কৌশল চিন্তা করুন।
ধাপ #5: প্লেলিস্ট তৈরি করুন এবং শেয়ার করুন
একটি চ্যানেলের একেকটি প্লেলিস্ট চ্যানেলের জন্য ক্যাটাগড়ি স্বরুপ। যা দেখে যেকেউ বুঝতে পারে যে কোন ক্যাটাগরিতে কোন ধরনের ভিডিও পাবলিশ করা হয়।
কিন্তু যদি আপনার চ্যানেলটি সাজানো না থাকে, তাহলে কেউ সেটা খুজে নিতে চাইবে না বা আপনার চ্যানেলে সময় নষ্ট না করে অন্য চ্যানেলে চলে যাবে। কারন আমাদের হাতে অপশন অনেক।
এজন্য অবশ্যই আপনার চ্যানেলটিকে প্লেলিস্ট আকারে সাজাতে হবে। যাতে দেখতে সুন্দরলাগে। এবং সেই প্লেলিস্টটি সোশ্যার মিডিয়ার মাধ্যমে শেয়ার করুন। যাতে করে কেউ যদি কোন টপিক সম্পর্কিত জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে এক যায়গা থেকেই দেখে নিতে পারবে।
ধাপ #6: আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার দর্শকদের কাছে ভিডিও প্রচার করুন
ভিডিও এর বাহিরেও কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় ক্রাউড স্পেস যেখানে প্রতিদিন বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ তাদের দিনের অনেকটা সময় পার করে। তাই আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে রেখে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করে সফল বা জনপ্রিয় হতে পারবেন না।
এজন্য আপনাকে আপনার চ্যানেলের নাম অনুসারে সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেই একাউন্টের মাধ্যমে প্রতিদিন কিছু অ্যাক্টিভিটি পোষ্ট করতে হবে যাতে আপনার ভিডিটরেরা একাউন্ট ছেড়ে চলে না যায়।
ধাপ #7: দর্শকদের গ্রাহকে পরিণত করুন
আমি এখন পর্যন্ত যে পদক্ষেপগুলি বর্ণনা করেছি সেগুলি আপনাকে আরও ভিউ পেতে সহায়তা করবে৷ কিন্তু ভিউ আপনার YouTube চ্যানেল বৃদ্ধির একটি অংশ মাত্র।
কিন্তু অন্য অংশ? আপনার ভিউয়ারদের আপনার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করানো। সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার অন্যতম সেরা উপায় হল আপনার ভিডিওর শেষে একটি সাবস্ক্রাইব বোতাম যোগ করা। যার ফলে যারা নতুন ব্যবহারকারীতারাও এটা ক্লিক করে আপনার চ্যানেলটিকে তার একাউন্টের সাথে কানেক্ট করে রাখতে পারে।
সাবস্ক্রাইব করা মানে সে আপনার গ্রাহক হয়ে গেল। এখন আপনি যাই পোষ্ট করেন না কেন আপনার ভিডিও তার টাইমলাইনে চলে যাবে। এতে করে আপনার তাকে আলাদাভাবে আর ইনভাইট করা লাগবে না। এমনিতে সে আপনার ভিডিও দেখতে পারবে।
বোনাস ধাপ: Google অনুসন্ধানে ভিডিও র্যাঙ্ক করতে এসইও করুন
ঠিক কথাই! ইউটিউব ভিডিওর জন্য ঠিকঠাকভাবে SEO সেটআপ করা কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়, একেবারে অত্যন্ত জরুরি। যেহেতু আপনি আপনার ভিডিওগুলো তৈরিতে এত সময় ব্যয় করেছেন, তাই নিশ্চিত করুন যে আপনি সেগুলো থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা লাভ করছেন এবং আপনার চ্যানেলটি লোকজন খুঁজে পেতে পারছে।
ইউটিউব খুবই জটিল একটি সার্চ ইঞ্জিন এবং লোকজন কোন নির্দিষ্ট ক্রিয়েটরকে মাথায় না রেখে নতুন কন্টেন্ট খুঁজে পেতে এটি প্রচুর ব্যবহার করে। এর মানে হল, সঠিক কীওয়ার্ড বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি খুঁজে পাওয়া, দেখা এবং উপভোগ করা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
আপনি যে ধরনের ভিডিও তৈরি করতে চান তার অনুরূপ ভিডিও ইতিমধ্যেই থাকলে, ফলাফল পেতে আপনি যে সঠিক শব্দগুলো টাইপ করেছিলেন সেগুলোতে এক নজর দেখুন। তারপরে ফলাফল কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা দেখতে সেগুলোতে সামান্য পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন যাতে আপনি কীভাবে একটি বা দু’টি শব্দ পরিবর্তন করে ফলাফল পরিবর্তন করতে পারেন তা দেখতে পারেন। আপনি যে কীওয়ার্ডগুলি ব্যবহার করতে চান সেগুলি, তাদের জনপ্রিয়তা এবং আপনার প্রতিযোগীরা যে কীওয়ার্ডগুলি ব্যবহার করে সেগুলি সম্পর্কে গবেষণা করুন।
এই টিপসগুলো ব্যবহার করে আপনি ইউটিউবে আরও বেশি লোকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন এবং আপনার চ্যানেলকে আরও জনপ্রিয় ও সফল করে তুলতে পারবেন।
উপসংহারঃ
আপনার চ্যানেলটি যদি আপনি খুব দ্রুত র্যাংক করাতে চান তবে আপনাকে আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে আর সেটা হল ভিডিও আপলোডের ধারাবাহিকতা। আপনি যদি প্রতিদিন একটি ভিডিও দেন, তাহলে চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একটি ভিডিও দিতে। আর যদি সপ্তাহে একটি দেন তাহলে সেটাও চেষ্টা করবেন।
কাজে গ্যাপ দিয়ে ভিডিও আপলোড করলে ইউটিউবের অ্যালগরিদম মনে করে যে আপনি কাজের ক্ষেত্রে নিয়মিত নয়। এজন্য অটোমেটিক আপনার চ্যানেল এর রেংক কমে যাবে। ধন্যবাদ!