রমজানকে স্বাগত: মন, শরীর ও আত্মার রমজান মাসের প্রস্তুতি
মাশকুরা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে ছিল। আগ্রহের সাথে একটু উদ্বেগ মিশে আছে তার মনে। ইসলামী ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান দ্রুত এগিয়ে আসছে। আত্মিক প্রতিফলন, আত্মসংযম, এবং আল্লাহর সাথে যোগাযোগের মাস এটি। মাশকুরা এই মহান সময়কে মূল্যায়ন করলেও তার মনে একটা আকাঙ্ক্ষা সবসময় কাজ করে – তিনি চান, সম্পূর্ণ প্রস্তুতির মাধ্যমে রমজানের পূর্ণাঙ্গ অনুগ্রহ লাভ করতে।
রমজানের জন্য প্রস্তুত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন কারন রোজাই এই মাসের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু, যেভাবে ক্রীড়াবিদরা কোনো বড় প্রতিযোগিতার আগে অনুশীলন করে, ঠিক সেভাবে, রমজানের আগে নিজের মন, শরীর ও আত্মাকে প্রস্তুত করা এই মাসে আধ্যাত্মিক বিকাশের পূর্ণ সম্ভাবনাকে সঞ্চারিত করে।
রোজার প্রস্তুতির শক্তি: তথ্য ও পরিসংখ্যান
গবেষণায় দেখা যায়, পরিকল্পিত প্রস্তুতি রমজানের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। একটি আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী, ৭৫% এরও বেশি মুসলিম যারা রমজানের আগে কোনো না কোনো প্রস্তুতি নিয়েছেন, তারা এই মাসে অনেক বেশি আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা ও যোগাযোগ লাভের কথা জানিয়েছেন। [সূত্র: গ্লোবাল ইসলামিক ইনসাইটস সার্ভে]
আধ্যাত্মিক পুনরুজ্জীবন:
- ক্রমবর্ধমান ইবাদত: রমজানের প্রথম দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না আপনার নামাজ বাড়ানোর জন্য। এখন থেকেই অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করা শুরু করুন, যেমন তাহাজ্জুদ (রাতের নামাজ) বা দুহা (মধ্য-সকালের নামাজ)।
- কুরআনের গভীরে যান: প্রতিদিন অন্তত কিছু আয়াত পাঠ এবং সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার লক্ষ্য রাখুন। শব্দের পেছনের অর্থ বোঝা কুরআনের সাথে আপনার যোগাযোগকে গভীরতর করবে।
- ক্ষমা প্রার্থনা করুন ও সংশোধন করুন: রমজান হলো নিজেকে শুদ্ধ করার সময়। যাদের সাথে হয়তো অন্যায় করেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চান। মনের ক্ষোভগুলো ছেড়ে দিন।
মানসিক ফোকাস:
- নিয়ত সেট করুন: রমজানে আপনি কী অর্জন করতে চান? শুধু খাবার থেকে বিরত থাকা নয়, বরং খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা, ভালো চরিত্র গঠন, বা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক জোরদার করার কথা ভাবুন।
- বিক্ষেপগুলি কমান: সময় নষ্টকারী কাজগুলো সনাক্ত করুন (সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রোলিং, অযথা টিভি দেখা ইত্যাদি) এবং ধীরে ধীরে সেগুলো কমিয়ে আনুন। এই মানসিক প্রস্তুতি আপনাকে রমজানে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।
- দোয়ার শক্তি: আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। শুধুমাত্র বস্তুগত জিনিস নয়, বরং রমজানে অধিক দিকনির্দেশনা, দৃঢ়তা এবং একটি উন্মুক্ত হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করুন।
শারীরিক প্রস্তুতি:
- ক্যাফেইন ছাড়ুন: যদি আপনি কফি বা চায়ের উপর বেশি নির্ভরশীল হন, রোজার শুরুর দিনগুলোতে মাথাব্যথা এবং বিরক্তি কমাতে এখন থেকেই এগুলোর সেবন কমিয়ে দিন।
- হাইড্রেশন মূল চাবিকাঠি: দীর্ঘক্ষণ রোজা রাখার জন্য আপনার শরীরকে তৈরি করতে সারাদিন প্রচুর পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত খাবারের ওপর বেশি নির্ভর না করে পুষ্টিকর এবং সুষম খাবারে মনোযোগ দিন। এটি আপনার শরীরকে রোজার সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে।
ব্যবহারিক পরামর্শ:
- রমজানের রুটিন তৈরি করুন: নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, এবং দান-সদকার জন্য সময় নির্ধারণ করে একটি রুটিন তৈরি করুন।
- বুদ্ধিমানের মতো মজুদ করুন: অযথা মজুদ করা এড়িয়ে চলুন, তবে সুহুর (সেহরি) এবং ইফতারের জন্য স্বাস্থ্যকর ও পঁচনসহজ খাবার ঘরে রাখুন।
- পরিবার/সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করুন: আপনি যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে থাকেন, আলোচনা করুন যে কীভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রমজান পালন করবেন। স্থানীয় মসজিদের সাথে যোগাযোগ রাখুন স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ এবং ইফতারের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন।
রমজানের প্রস্তুতি একটি যাত্রা
এই প্রস্তুতি আপনাকে হতাশ করার জন্য নয়। ধীরে ধীরে আপনার মন, শরীর, এবং আত্মাকে এই মহান মাসকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানোর জন্য মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার এটি। হতে পারে মহান আল্লাহপাক এই মাসের উছিলায়, আপনার বিগত দিনের সকল গোনাহ্ মাফ করে দিয়েছেন।
রমজান মাসের ফজিলত ও দোয়া যেগুলো বেশি বেশি করতে হবে
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই তবে হ্যা, কিছু দোয়া আমাদের নবী করীম (সঃ) বেশি বেশি পড়তেন। সেগুলো কিছু দোয়া নিচে আপনাদের জন্য দেয়া হল –
১. তাসবিহ পড়া
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।
২. ইসতেগফার করা অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া। হাদিসে অনেক ইসতেগফার এসেছে। এর যেকোনোটি পড়লেই হবে-
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
বাংলা উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
রোজার নিয়ত নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন যে, আসলে এটা না পড়লে কি রোজা হবে না। আসলে দেখুন অনেক বড় বড় আলেমে দিন বলেছেন, এটা তেমন কোন গুরুত্বপূর্ন বিষয় নয়। আপনি চাইলে পড়তে পারেন না পড়লেও আপনার রোজার কোন সমস্যা হবে না। কারন, আপনিতো ঔই আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখেই রোজা রাখছেন। সুতরাং নিয়তের কি দরকার। যাইহোক পড়লে কোন সমস্যা নায়।
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম।
The best Online Portal for Islam: https://www.islamestic.com/
আপনাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর
2024 সালের প্রথম রমজান কত তারিখ?
যেহেতু, রমজান শুরু হয় চাদ দেখার মাধ্যমে এবং রোজা ভাঙতেও হয় চাদ দেখার মাধ্যমে। সুতরাং সম্পূর্ন ফিক্স তারিখ এখনো জানা যায়নাই। তবে, ধারন করা যাচ্ছে যে মার্চের ১০ তারিখ দীবাগত রাতে থেকে রোজার নিয়ত করবে বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রান মুসুল্লিরা।
রমজান শুরুর তারিখ?
ধারন করা যাচ্ছে যে মার্চের ১০ তারিখ দীবাগত রাতে থেকে রোজার নিয়ত করবে বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রান মুসুল্লিরা।
2024 সালের রমজান কিভাবে শুরু হবে?
এই প্রশ্নটি সঠিকভাবে বোঝা যায়নি। তবে, রমজান প্রতিবারের ন্যায় এবারও সকল পাপ-কালিমা মূছে ফেলার জন্যই শুরু হবে। এবং ইনশাল্লাহ সকলে আল্লাহর কাছে আমরা আমাদের মাগফিরাতের জন্য অনেক দোয়া করতে পারবো।
২০২৪ সালের রমজান ও ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
উত্তরটি উপরে দেওয়া হয়েছে যে রোজার সম্ভাব্য তারিখ কত। রোজা যদি ১০ মার্চ থেকে শুরু হয় ইনশাল্লাহ ইদুল ফিতর হবে ৮/৯ এপ্রিল, ২০২৪ ।