একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করার সম্পূর্ন নিয়ম নিয়ে আমরা সাজিয়েছি আমাদের আজকের এই পর্ব। আমরা আজ আপনাদের দেখাবো কিভাবে একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করা যায় উইন্ডোজ ১০ এর অপারেটিং সিস্টেম ফাইল ব্যবহার করে। এই বুটেবল প্রসেসটি সম্পন্ন করতে আমরা ব্যবহার করবো রুফাস পেনড্রাইভ বুটেবল সফটওয়্যার।
আমাদের প্রথম জীবনের কথা বলি যখন কোন একটি কম্পিউটারে OS ফল্ট বা নষ্ট হলে সেটা সেটাপ দিতে হয়তো কম্পিউটার দোকানে যেতে হতো; আর না হয় সিডি ক্রয় করে তারপর সিডি থেকে অপারেটিং সিস্টেম সেটাপ দিতে হত। কিন্তু দিনদিন প্রযুক্তির বিপুল পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অনেক কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে উঠেছে।
এখন আর OS সেটাপ দেওয়া তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। মাত্র ৮/১০ মিনিটে যেকোন একটি পেনড্রাইভ এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম সেটাপ দেওয়া যায়।
যা যা থাকছে আজকের এই পর্বে
- পেনড্রাইভ কেন বুটেবল করবো?
- অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে ডাউনলোড করবো?
- কিভাবে পেনড্রাইভ বুটেবল করতে হয় শুরু থেকে শেষ
- পেনড্রাইভ বুটেবল সফটওয়্যার ডাউনলোড
পেনড্রাইভ কেন বুটেবল করবো?
একটি বুটযোগ্য USB ড্রাইভ আপনাকে হার্ড ড্রাইভে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল বা লোড করতে দেয়৷ এছাড়াও এটি ব্যবহার হয় যখন আপনি Windows OS পরিবেশের বাইরে থেকে কোন ডায়াগনস্টিক চালানোর চেষ্টা করেন যেমন- নো-বুট পরিস্থিতি, ভাইরাস সংক্রমণ বা সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি।
বেশিরভাগ বুটেবল মিডিয়া ইমেজ ফরম্যাটে পাওয়া যায় যা দ্রুত একটি সিডিতে রাইট করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি USB ড্রাইভ ব্যবহার করেও অনেক সহজে অপারেটিং সিস্টেম বুটেবল করতে পারবেন। যার মাধ্যমে আপনি সিডির মত করে কোন একটি কম্পিউটারে নতুন অপারেটিং সিস্টেম দিতে সক্ষম হবেন।
অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে ডাউনলোড করবো?
আমাদের পেনড্রাইভ বুটেবল করার জন্য যেটা সবথেকে বেশি দরকারী তা হল অপারেটিং সিস্টেম এর ইমেজ ফাইল। তাই আমরা এখন আপনাদের কয়েকটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম এর ইমেজ ফাইল ডাউনলোড করার কিছু লিংক প্রদান করবো।
১। উইন্ডোজঃ উইন্ডোজ হল বিশ্বের সবথেকে বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৮০% ব্যক্তি উইন্ডোজ ব্যবহার করে। যার মালিক বা উদ্ভাবক হচ্ছে বিল গেটস, যে বিশ্বের সবথেকে বড় ধনীদের লিস্টের প্রথম 03 জনের মধ্যে একজন।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক করুন ।
২। উবুন্টুঃ উবুন্টু হল লিনাক্স ভিত্তিক একটি ফ্রি ও ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা ডেবিয়ান থেকে তৈরি। এটি সাধারনত নতুনদের জন্য একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম লিনাক্স শেখার জন্য। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য ডিজাইন করা হলেও আপনি চাইলে এটা সার্ভারে ব্যবহার করতে পারবেন।
উবুন্টু ডাউনলোড করার লিংকঃ ক্লিক করুন ।
৩। লিনাক্স মিন্টঃ লিনাক্স মিন্ট হল লিনাক্স এর আরেকটি ভার্সনের নাম। তবে এটা অনেক বেশি জনপ্রিয় কম্পিউটারে ব্যবহার করার জন্য। এটি উবুন্টুর থেকে দ্রুতগতী সম্পন্ন। লিনাক্স মিন্ট একটি রক্ষণাবেক্ষণ ট্যাবে সহজ অ্যাক্সেস সরবরাহ করে যা দক্ষতার সাথে সমস্যা বা আপডেটগুলি সমাধান করতে সহায়তা করে।
লিনাক্স মিন্ট এর ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক করুন ।
৪। জরিন ওএসঃ Zorin OS হল উবুন্টুর উপর ভিত্তি করে একটি লিনাক্স বিতরণ। এটি ডিফল্ট হিসাবে একটি GNOME 3 বা XFCE 4 ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহার করে, যদিও উইন্ডোজ এবং macOS থেকে ব্যবহারকারীদের স্থানান্তর করতে সহায়তা করার জন্য ডেস্কটপটি ব্যাপকভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে।
Zorin OS ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক করুন ।
পেনড্রাইভ বুটেবল সফটওয়্যার ডাউনলোড
পেনড্রাইভ বুটেবল করার জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার পাওয়া যায় অনলাইনে। তবে আমরা যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করবো সেটা আপনি সম্পূর্ন বিনামূল্যে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। সফটওয়্যারটির নাম রুফাস (Rufus)। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করে নিতে পারবেন।
তাই আর দেরি কিসের এখনই ডাউনলোড করুন রুফাস সফটওয়্যার।
পেনড্রাইভ বুটেবল করার পদ্ধতি শুরু থেকে শেষ
পেনড্রাইভ বুটেবল করতে প্রথমেই উইন্ডোজ ইমেজ ফাইলটি আপনার কম্পিউটারে কপি করে রাখুন। তারপর ডাউনলোড করা রুফাস সফটওয়্যারটি ডাবল-ক্লিক করে ওপেন করতে হবে। এই সফটওয়্যারটি ইনস্টল করার দরকার পরে না কারন এটি একটি সিঙ্গেল .EXE ফাইল।
ধাপ ০১ঃ আপনি যদি সফটওয়্যারটি ওপেন করার পূর্বে আপনার পেনড্রাইভটি কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে রাখেন। তাহলে রুফাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পেনড্রাইভটি সিলেক্ট করে নিবে। নিচের চিত্রটি দেখুন।
ধাপ ০২ঃ এখন আমরা একপলক Boot Selection লিস্টগুলো দেখে নিব। তবে যেহেতু আমরা ইমেজ ফাইল ব্যবহার করে বুটেবল করবো তাই এখানে কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। কারন এখানে Disk or ISO image ডিফল্ট সিলেক্ট থাকবে।
ধাপ ০৩ঃ এরপর আমরা ডানপাশের সিলেক্ট অপশনের মাধ্যমে আমাদের ISO image ফাইলটি সিলেক্ট করে দিব। সিলেক্ট করার সাথে সাথে দেখবেন আমাদের বুট সিলেকশন পরিবর্তন হয়ে যাবে আমাদের ইমেজ ফাইলের নামে। এরপর ধাপ ০৪ অনুসরন করুন।
ধাপ ০৪ঃ বুট সিলেকশনের পরে যে অপশনটি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন সেটা হল ‘Partition Scheme’। যা পেনড্রাইভ বুটেবল করার পূর্বে আপনাকে জেনে নিতে হবে। যে আপনার কম্পিউটারটি কোন পার্টিশন মোডে তৈরি MBR নাকি GPT । তবে সাধারনত MBR মোডটা সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়।
ধাপ ০৪ঃ এরপর বাকি সেটিংস যা আছে তাই থাকবে। চাইলে আপনি আপনার পেনড্রাইভ বুটেবল এর নামটা পরিবর্তন করতে পারবেন। অন্যথায় START বাটনে ক্লিক করতে হবে। স্টার্ট বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে একটি পপ-আপ স্ক্রিন আসবে যেখানে বলা আছে যে, আপনি যদি OK বাটনে ক্লিক করেন তাহলে আপনার পেনড্রাইভের যাবতীয় তথ্য মুছে যাবে।
এরমানে এই প্রসেসটি শুরু করার পূর্বে আপনার পেনড্রাইভে কোন দরকারী ফাইল থাকলে অবশ্যই সেটা সরিয়ে নিতে হবে। কারন প্রসেসটি শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রথমে আপনার পেনড্রাইভটিকে সম্পূর্ন ফরম্যাট করবে তারপর অপারেটিং সিস্টেম ফাইল বুটে করবে। এজন্য অবশ্যই এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
ধাপ ০৫ঃ এরপর OK বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে প্রসেসটি শুরু হয়ে যাবে। প্রসেসটি সম্পন্ন হতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ ০৬ঃ প্রসেসটি সম্পন্ন হলে আপনার বুটেবল পেনড্রাইভ রেডি। এখন আপনি আপনার উইন্ডোজ মেশিনে অপারেটিং সিস্টেম সেটাপ করতে পারবেন।
সর্বশেষ ধাপঃ আমাদের ফাইলটি সঠিকভাবে বুটেবল হয়েছে কিনা যাচাই করতে একবার পেনড্রাইভটি ওপেন করে দেখুন। হ্যা আমাদের পেনড্রাইভটি সঠিকভাবে বুটেবল হয়েছে।
পরিশেষে কিছু কথা
আমরা আজ আপনাদের দেখালাম যে কিভাবে একটি পেনড্রাইভ বুটেবল করতে হয়। বুটেবল করার জন্য আমাদের সকল প্রসেসগুলো সঠিকভাবে অনুসরন করুন।
এবং আমরা পরবর্তি অনুচ্ছেদে দেখাবো কিভাবো আমরা এই বুটেবল পেনড্রাইভ দিয়ে একটি কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম সেটাপ করতে হয়। আমাদের সাইটটিকে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন তাহলে প্রতিনিয়ত সকল নতুন নতুন আপডেট পেয়ে যাবেন সবার আগে।
অনেক দরকারি একটি পোস্টে