ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন একটা সোনার হরিন যারা অনলাইনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্লগ লেখালেখি বা ইউটিউবিং করে থাকেন। আজ আমরা মনিটাইজেশনের উপর একটা বাস্তব গল্প শেয়ার করব। যে কিভাবে আমরা একটা ওয়েবসাইট খোলার ২১ দিনের মাথায় গুগল এডসেন্স ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন পেলাম।
গুগল ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। যা আমরা এই অনুচ্ছেদে ধাপে ধাপে আপনাদের দেখাবো। সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন।
Read: একটি ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা শুরু করার ৮টি মূলমন্ত্র!
গুগল এডসেন্স কি
প্রথমেই আমরা জেনে নিব যে গুগল এডসেন্স কি। গুগল এডসেন্স হল গুগলের একটা অনলাইন সার্ভিস যার মাধ্যমে গুগল তাদের এডভার্টাইজমেন্ট প্রকাশকদের অর্থ প্রদান করে থাকে। এই সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লগ সাইটে, ইউটিউবে, মোবাইল এ্যাপ এ এডভার্টাইজমেন্ট প্রকাশ করা হয় এবং তার বিনিময়ে গুগল প্রকাশকদের একটা এমাউন্ট প্রদান করে থাকে।
তাই বলতে পারি গুগল এডসেন্স হল এড প্রকাশকদের ইনকাম ও এডভার্টাইজমেন্ট মনিটরিং এর জন্য একটা প্লাটফর্ম। গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য একটা প্রসেস এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় যার মাধ্যমে প্রকাশকরা গুগল এর কাছে তাদের নিজেদের সার্ভিসটি তুলে ধরে যেমন- ব্লগ সাইট, ইউটিউব চ্যানেল, মোবাইল এ্যাপ ইত্যাদি।
তারপর গুগল সেই সার্ভিস বা পরিষেবাটি পর্যালোচনা করে দেখে যে প্লাটফর্মটি গুগল এডসেন্স পাওয়ার যোগ্য কিনা। যদি প্লাটফর্মটি এডসেন্স পাওয়ার জন্য আদর্শ হয় তখন গুগল সেই প্লাটফর্ম এর উপর এড মনিটাইজেশন এ্যাকটিভ করে দেয়। তখন শুরু হয় এড এর উপর ইনকাম। আপনার প্লাটফর্মে যত বেশি ভিজিটর এড দেখবে ইনকাম তত বেশি হবে।
২১ দিনে ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন কিভাবে পেলাম
ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন পাওয়া অনেক সহজ যদি কিনা আপনি নিয়ম মেনে সঠিকভাবে কাজ করেন। আর যদি নিয়ম না মেনে কাজ করেন এবং গুগল এর পলিসি ভঙ্গ করেন তাহলে মনিটাইজেশন পাবেন না। যেমন – অন্যের পোস্ট কপি করা, ক্রাক সফটওয়্যার লিংক, স্পাম, ক্রাইম তথ্য, পর্নোগ্রাফি, উষ্কানিমূলক তথ্য ইত্যাদি।
এছাড়াও আরেকটি তথ্য জানা জরুরি অনেকে মনে করে যে মনিটাইজেশন পেলে আর কোন সমস্যা নেই তখন কপি-পেস্ট করব। না বন্ধুরা এটা করা যাবে না। আপনি গুগল এর পলিসি ভঙ্গ করলে যেকোন সময় আপনার মনিটাইজেশন বাতিল হতে পারে।
তাহলে বন্ধুরা আর দেরি কিসের চলো শুরু করা যাক আমাদের আজকের মূল আলোচনা। তোমাদের সাথে আমি আজ যে বিষয়গুলো শেয়ার করতে যাচ্ছি সেগুলো আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। তবে শেখার কোন শেষ নেই তাই বেশি বেশি জানতে বেশি বেশি পড়াশোনা করুন আপনার সাইটটি গুগল এর টপে তোলার জন্য।
বন্ধুরা আমরা আমাদের আজকের এই সম্পূর্ন গাইডলাইনটি ১০টি ধাপে বিভক্ত করেছি। সকলের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে লিখাটা একটু বড় হবে কিন্তু প্রতিটা ধাপ খুব মনোযোগ সহকারে দেখবেন ও বোঝার চেষ্টা করবেন।
- একটা ডোমেইন ও হোস্টিং কিনুন
- ওয়ার্ডপ্রেস থিম ইনস্টল করুন
- Rank Math সহ কিছু প্লাগিন ইনস্টল করুন
- কপি-পেস্ট ছাড়া নতুন পোস্ট লিখুন
- প্রতিটা পোস্টের জন্য এসইও ফ্রেন্ডলি কিওয়ার্ড এনালাইসিস করুন
- ওয়েবসাইট এনালাইসিস করুন
- প্রতিটা পোস্ট বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেস্ক করুন
- চেকলিস্ট ফর গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল
- গুগল ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন রিকোয়েস্ট
- মনিটাইজেশন পরবর্তি কিছু পরামর্শ
1. একটা ডোমেইন ও হোস্টিং কিনুন
প্রথমেই আমি যে বিষয়টার ব্যাপারে আলোচনা করব সেটা হল ডোমেইন ও হোস্টিং। একটা ব্লগ সাইট তৈরি করতে প্রথমেই যে জিনিসটা লাগে তা হল ডোমেইন ও হোস্টিং। তাই আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করার আগেই এই ছোট ইনভেস্টটা করতেই হবে।
তবে একটা প্রশ্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় অনেকের মুখেই শুনে থাকি যে ব্লগিং কি ফ্রি ডোমেইনে করা যাবে?
আমার উত্তর হবে – হ্যা করা যাবে। তবে ফ্রি ডোমেইন ব্যবহারে অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। যেমন- নিজের কোন কন্ট্রোলিং থাকে না এবং বড় যে সমস্যা সেটা হল আপনার সাইটের তথ্যা বা ডাটাবেস নিজের কাছে থাকে না। তাই সবসময় আপনার তথ্য নিয়ে আপনাকে চিন্তিত থাকতে হবে।
নিজস্ব মতামতঃ
ডোমেইন ক্রয় করার পূর্বে সবার জন্য আমার একটা পরামর্শ; অন্তত ২/৩ দিন চিন্তা করুন যে আপনার ডোমেইন নামটা কি হবে। খাতায় নোট করতে পারেন আপনার পছন্দের নামগুলো। কারন নিজের একটা বিজনেস আইডি তৈরি করতে যাচ্ছেন নামটা একটু আলাদা না হলে কি চলে।
কারন চিন্তা না করে নামটা সিলেক্ট করলে ১ বছর এর মধ্যে আর পরিবর্তন করতে পারবেন না। ১ বছর এর জন্য আপনার সাইটটির রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। আর অবশ্যই সবসময় .com এর ওয়েবসাইট সিলেক্ট করুন। এই সকল ডোমেইন সাইটগুলো দ্রুত র্যাংক করে।
আমার সাইটটি আমি জুলাই মাসের ২৬ তারিখে রেজিস্ট্রেশন করেছি। কিন্তু মাত্র ২১ দিনে আমার সাইটের মনিটাইজেশন এপ্রুভ হয়েছে।
2. ওয়ার্ডপ্রেস থিম ইনস্টল করুন
ওয়ার্ডপ্রেস বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বহুল পরিচিত ও বহুল ব্যবহ্রত ফ্রি ওপেন-সোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। একটা গবেষনায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০০ ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রায় ৬০টি ওয়েবসাইট তৈরি হয় এই ওয়ার্ডপ্রেসে।
উপরের তথ্যের ভিত্তিতে বুঝতেই পারছেন যে ওয়ার্ডপ্রেস এর চাহিদা কেমন। এছাড়াও আপনারা যারা নতুনভাবে কোন ব্লগিং বা কোন সাইট তৈরি করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য ওয়ার্ডপ্রেস অনেক সহজলোভ্য হবে কারন এর মাধ্যমে সাইট ডেভেলপমেন্ট করতে তেমন কোন ইনভেস্ট করার প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র ডোমেইন ও হোস্টিং ছাড়া।
ওয়ার্ডপ্রেস সেটাপ করার আরেকটা বড় সুবিধা হল ওয়ার্ডপ্রেস স্টোরে অনেক ফ্রি প্লাগিন পাওয়া যায় যা ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার সাইটের এসইও করতে পারবেন সম্পূর্ন বিনামূল্যে। প্লাগিন নিয়ে আলোচনা নিচে করা হবে ধাপে ধাপে এগিয়ে যান।
নিজস্ব মতামতঃ
আমিও প্রথমদিকে ব্লগ সাইট তৈরি করার পূর্বে চিন্তা করতাম যে একটা সম্পূর্ন সাইট সাজাতে মনে হয় অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। তাই গুগল এর ব্লগস্পোট এ সাইট তৈরি করি কিন্তু সত্যি কথা বলতে এটা ফ্রি জিনিসতো তাই তেমন সিরিয়াস ছিলাম না এবং আরেকটা বড় অসুবিধা হল নিজের মতো করে কিছু করা যায় না।
পরবর্তীতে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিজেই ডেভেলপমেন্ট করলাম আমার নিজের ব্লগ সাইট। আপনাদের বললে বিশ্বাস করবেন না আমি আমার ব্লগ সাইটটি মাত্র ১ ঘন্টায় তৈরি করেছি এবং সম্পূর্ন সেটাপ শেষ করেছি।
তাই আমার পরামর্শ, প্রথমদিকে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই যাত্রা শুরু করার জন্য। আর যদি ওয়ার্ডপ্রেস না জেনে থাকেন তাহলে সম্পূর্ন ওয়ার্ডপ্রেস সেটাপ সহ ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয় করে খুব কম খরচে ওয়েব সাইট তৈরি করে নিতে পারেন।
3. Rank Math সহ কিছু প্লাগিন ইনস্টল করুন
Rank Math নামটার সাথে পরিচিত থাকুন বা না থাকুন এটা কিন্তু আপনার জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটা এসইও টুলস। আমি ওয়ার্ডপ্রেস এ Rank Math SEO টুলস ছাড়াও আরো কিছু টুলস ব্যবহার করেছি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় যে এসইও করার জন্য যে বিষয়গুলো প্রধান দরকার একটা সাইট এর জন্য তার প্রতিটা ধাপ এর মধ্যে রয়েছে।
এই টুলস এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিটা পোস্ট এর টাইটেল, ডেসক্রিপশন, ইমেজ, কিওয়ার্ড, ইউআরএল লিংক, ইন্টারনাল লিংক, এক্সটার্নাল লিংক ও আর্টিকেল ওয়ার্ড সংখ্যা ইত্যাদি প্রায় সবকিছুরই সাজেশন পাবেন। Rank Math প্রতিটা পোস্ট এর উপর একটা রেটিং করে যা ১০০ পর্যন্ত তোলা যায় তবে ৮১ থেকে ভাল এসইও বলা চলে।
এছাড়াও আপনি একজন নতুন ব্লগার হিসেবে আরো কিছু প্লাগিন ইনস্টল করতে পারেন। যেমন – MonsterInsights, Page View Count, Add to Share, Image Optimizer Smush, JetPack ইত্যাদি।
নিজস্ব মতামতঃ
আমি Rank Math টুলস প্রায় ২ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু এটা আমার কাছে অনেক বেশি সহজ মনে হয়। তাই পরামর্শ দিব যে এই টুলসটা একবার ব্যবহার করে দেখবেন।
এছাড়াও আরেকটি বিষয়, আপনি যত কম প্লাগিন আপনার ওয়ার্ডপ্রেসে যোগ করবেন তত ভাল পারফরমেন্স পাওয়া যায়। তাই অপ্রয়োজনীয় বেশি প্লাগিন ব্যবহার না করাই ভাল।
4. কপি-পেস্ট ছাড়া নতুন পোস্ট লিখুন
গুগল এর এডসেন্স মনিটাইজেশন না পাওয়ার বড় সমস্যা হচ্ছে ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট ব্যবহার। আপনারা যারা নতুন ব্লগিং শুরু করেছেন বা করবেন তারা অনেকেই হয়তবা এই বিষয়টা খুব সহজভাবে দেখে। অনেকেই মনে করে যে কোন সাইট থেকে যদি আমি কিছুটা কপি করে নেই হয়ত গুগল বুঝতে পারবে না। কিন্তু বন্ধুরা এই বিষয়টা সম্পূর্ন ভুল ধারনা।
গুগল এর রোবট প্রক্রিয়া এখন অনেক বেশি উন্নত। আপনি যদি কোন সাইট থেকে কোন তথ্য কপি করে নেন তাহলে গুগল এর রোবট খুব সহজেই সেটা ধরে ফেলতে পারবে। এবং এর জন্য আপনার সাইটের মনিটাইজেশন প্রক্রিয়া চিরতরে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
একজন টপ গুগল এনালিটিক্স এর তথ্য মতে, আপনি যদি কপি-পেস্ট করে ১৫০০+ ওয়ার্ড এর একটি পোস্ট গুগল এ সাবমিট করেন এবং বিপরিতে অন্যকেউ একই টপিক এর উপর ৫০০-৬০০ ওয়ার্ড এর একটা পোস্ট করে গুগল এ সাবমিট করে। তখন গুগল দুটি পোস্টই এনালাইসিস করে এবং ফলাফল অনুসারে বড় কন্টেন্ট এর থেকে এই ৫০০-৬০০ ওয়ার্ড এর ছোট আর্টিকেলটি বেশি রেটিং দেয় এবং গুগল সার্চ পজিশনে ছোট আর্টিকেলটি উপরে থাকে।
নিজস্ব মতামতঃ
বন্ধুরা সবসময় শর্টকার্ট ব্যবহার করা যায় না। সেজন্য আপনি যদি চিন্তা করে থাকেন যে আমি কপি করে দিনে ২টি পোস্ট করব। তাহলে সাইট অনেক দ্রুত মনিটাইজেশন হয়ে যাবে তাহলে বলব ভুল চিন্তা করছেন।
সাইট মনিটাইজেশ এর জন্য বেশি পোস্ট দরকার নাই। আপনি যদি ১৫০০+ ওয়ার্ড এর ২/৩ টা নতুন আর্টিকেল লিখতে পারেন সাথে ১৫-২০ টা ৫০০-৬০০ ওয়ার্ড এর। তাহলে আশাকরি আপনার সাইট মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য আদর্শ হয়ে উঠবে।
5. প্রতিটা পোস্টের জন্য এসইও ফ্রেন্ডলি কিওয়ার্ড এনালাইসিস করুন
এসইও সম্পর্কে প্রায় কম-বেশি আমরা সকলেই জানি। এসইও পারে অজানা বিশ্বকে আপনার নতুন বিষয় সম্পর্কে জানাতে। এসইও এর মাধ্যমে আপনার ব্লগ সাইটে দ্রুত ভিজিটর সংখ্যা বাড়াতে পারবেন ও মনিটাইজেশন দ্রুত এপ্রুভ হয়ে যাবে।
প্রথমদিকে এসইও এর চাহিদা অনেক বেশি থাকে কারন আপনার সাইটটি কেউ জানে না। সেজন্য প্রতিটা পোস্ট এর সাথে ভাল করে কিওয়ার্ড এনালাইসিস করে পোস্ট পাবলিশ করতে হবে।
কিওয়ার্ড হল এসইও এর একটি পার্ট। তবে আপনার পোস্টটি সবার কাছে পৌছানোর জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ খুব গুরুত্বপূর্ন। কারন কিওয়ার্ড রিসার্চ এর মাধ্যমেই আপনার পোস্টটি সার্চ ইঞ্জিনে খুজে পাওয়া যাবে।
সঠিকভাবে এসইও করার জন্য আগে এসইও সম্পর্কে জেনে নিন এজন্য সম্ভব হলে এসইও এর উপর একটা কোর্সটা করতে পারেন। দেখা গেছে অনেক ব্লগার হতাশ হয়ে ব্লগিং ছেড়ে চলে যায় তার একটাই কারন তারা সঠিকভাবে এসইও করতে জানে না। এসইও করার জন্য আপনি ইউটিউবেও অনেক ধরনের ভিডিও পাবেন। সেখান থেকেও আপনি এসইও সম্পর্কে শিখতে পারবেন।
নিজস্ব মতামতঃ
আমি নিজের সাইটের এসইও নিজেই করি। এসইও তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়। তবে হ্যা আপনাকে এসইও করার জন্য বিভিন্ন টেকনিকস্ সম্পর্কে জানতে হবে এর জন্য বড় বড় ডিজিটাল মার্কেটার বা এসইও মাস্টারদের ফলো করতে হবে।
আমি এসইও করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন Rank Math টুলস ব্যবহার করি যার আলোচনা উপরে করা হয়েছে। এছাড়াও একটা টুলস এর বিষয়ে আপনাদের জানাবো যা ব্যবহার করে আপনি অনেক সহজেই আপনার প্রতিটা পোস্ট এর এসইও করতে পারবেন।
টুলসটির নাম Ubersuggest Free Keyword Tool যেটা Neil Patel নামক এক ডিজিটাল মার্কেটারের তৈরি। আমি বিগত ৩/৪ বছর এই টুলসটা ব্যবহার করে আসছি। তবে সত্যি কথা বলতে এই টুলসটা ফ্রি ব্যবহার করেও অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, যা অন্য কোন এসইও টুলসে পাওয়া যায় না।
6. ওয়েবসাইট এনালাইসিস করুন
ওয়েবসাইট এনালাইসিস অনেক গুরুত্বপূর্ন একটা সাইটের সঠিকভাবে এসইও করার জন্য। এনালাইসিস করার মাধ্যমে একটা ওয়েবসাইটের অনেক খুটিনাটি সমস্যা ধরা পরে যা হয়তবা আপনি কখনো চিন্তাও করেননি। কিন্তু এইসকল বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ন একটা সাইটের উপরে ওঠার জন্য।
এনালাইসিস এর মাধ্যমে সাধারনত চেক করা হয় একটা সাইটের লোড স্পিড কেমন, সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি কি, সাইটের কোন ইরর আছে কি, সাইটটি এসএসএল সিকিউর কি, সাইটের কোন ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট আছে কি অথবা সাইটটি সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা হয়েছে কি ইত্যাদি।
একটা গল্প মনে মনে ভাবুন, আপনি একটা বাড়ি তৈরি করেছেন কিন্তু বাড়িটার কোয়ালিটি তেমন মজবুত না, কালারটা কেমন খেটখেটে, আর বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য কোন দরজা দিলেন না। তাহলে কি বাড়িটা সম্পূর্ন হবে? আপনি কিন্তু একটা বাড়ি তৈরি করেছেন এটা সঠিক। কিন্তু বাড়ির কাঠামোটা সঠিক নয়।
ঠিক তেমন আপনার সাইটের বিষয়টাও, আপনি একটা সাইট তৈরি করেছেন কিন্তু সাইটের কাঠামো উন্নয়নের জন্য কোন কাজ করলেন না তাহলে কি হবে।
আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং বা ব্লগিং বাহিরের থেকে দেখে খুব সহজ মনে করি। কিন্তু যখন মাঠে নামি তখন দেখি আর বল পাচ্ছি না তার কারন একটাই আপনি না বুঝে এবং কোন বিষয় না শিখে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাই হয়তবা একদিন হতাশ হয়ে আবার ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে চলে যাবেন।
এজন্যই আমি বলব আপনারা যারা ব্লগিং করছেন তারা একবার হলেও আপনার সম্পূর্ন সাইটটিকে এনালাইসিস করে দেখুন যে সবকিছু সঠিক আছে কিনা। আপনি কি ভাবছেন যে কিভাবে সাইটটি এনালাইসিস করবেন?
নো টেনশন! আপনাদের জন্য রয়েছে আমাদের সম্পূর্ন গাইডলাইন সেরা 10 ওয়েবসাইট এনালাইসিস টুলস একবার ঘুরে আসুন। আর শিখে নিন যে কিভাবে একটা সাইটের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এনালাইসিস করতে হয়।
নিজস্ব মতামতঃ
কোন প্রজেক্ট সফল করার জন্য এনালাইসিস অতিব জরুরি একটা বিষয়। অনেকে এই বিষয়গুলো অনেক জটিল এবং ঝামেলাপূর্ন মনে করে। কিন্তু একবার চিন্তা করুনতো আপনি পরিশ্রম করছেন কিন্তু সফল হচ্ছেন না এটা কষ্টের নয়?
অবশ্যই অনেক কষ্টের। আমার প্রথম একটা সাইট তৈরি ।।।
আমি প্রথমদিকে যখন কয়েকটি টুলস এর সন্ধান পেলাম যা ব্যবহার করে একটা সাইটের এনালাইসিস করা যায়। তখন থেকেই শুরু করে দিয়েছি সাইটের এনালাইসিস এবং যে বিষয়টা সামনে এসেছে তার সমাধান করেছি। তাহলে বন্ধুরা আর দেরি কিসের আপনিও শুরু করে দিন আপনার সাইট এনালাইসিস।
7. প্রতিটা পোস্ট বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করুন
আপনার সাইট তৈরি হয়ে গেল, পোষ্ট হয়ে গেল, কিওয়ার্ড এনালাইসিস হয়ে গেল। এখন আপনার সাইটের প্রতিটা পোষ্ট আপনি একে একে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করবেন। ইনডেক্স প্রসেসটা সম্পূর্ন জানতে হলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে যে সার্চ ইঞ্জিনগুলো কিভাবে কাজ করে।
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটি সার্চ ইঞ্জিন অনেক জনপ্রিয় যেমন- Google, Bing, এবং Yandex । আপনি চাইলে প্রতিটাতেই ইনডেক্স করতে পারেন। তবে এর মধ্যে থেকে গুগল সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন কারন ওয়েবসাইটের প্রায় ৮০% ভিজিটর এই সার্চ ইঞ্জিন থেকে আসে। গুগল ইনডেক্স কিভাবে কাজ করে দেখে আসুন এক পলক।
নিজস্ব মতামতঃ
গুগল বিশ্বের এক নাম্বার সার্চ ইঞ্জিন। প্রতিদিন গুগল লক্ষ-লক্ষ সাইটের পেজ ইনডেক্সিং করে থাকে। তাই গুগলের কাজটা আরো সহজ করে তুলতে আপনি নিজে থেকেই গুগল কনসোল ব্যবহার করে ইনডেক্সিং এর রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারেন। প্রতিটা সার্চ ইঞ্জিনের নিজস্ব ইনডেক্সিং প্লাটফর্ম আছে।
১। গুগলঃ https://search.google.com/search-console
২। বিংঃ https://www.bing.com/webmasters
৩। ইয়ানডেক্সঃ https://webmaster.yandex.com
8. চেকলিস্ট ফর গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল
এখন আপনার ওয়েবসাইট ও ওয়েবসাইটের প্রতিটা পোষ্ট যদি সফলভাবে ইনডেক্স হয়ে যায়। তাহলে আমাদের এই নিচের চেকলিস্ট আপনার জন্য। আমরা এমন কিছু চেকলিস্ট আপনাকে দিব যা চেক করে তারপর মনিটাইজেশন এ্যাপ্লাই করা যাবে। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক-
১। আপনার ব্লগের বিষয়বস্তুটা নির্দিষ্ঠ রাখুন। যেকোন একটা বিষয়বস্তুর উপর হলে ভাল হয়। নিচের কয়েকটি বিষয় চেক করুন যেগুলোর উপর গুগল মনিটাইজেশন প্রদান করে নাঃ
পর্নোগ্রাফি/১৮+ কন্টেন্ট
পাইরেটেড কন্টেন্ট
হ্যাকিং বা ক্র্যাকিং টিউটোরিয়াল
বেআইনি ড্রাগস/সামগ্রী
অন্য কোন অবৈধ বিষয় ইত্যাদি
২। টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহার করুন .com । আপনি ব্লগস্পোট ও ওয়ার্ডপ্রেস সাইটেও মনিটাইজেশন নিতে পারেন।
৩। আপনার সাইটটি সফলভাবে ইনডেক্স হয়েছে কি? না হলে এখনই ইনডেক্স করুন।
৪। আপনার সাইটে কোন ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট আছে কি? কোন ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট থাকলে সেটা রিমুভ করুন।
৫। আপনার সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি কি? মোবাইল ফ্রেন্ডলি হলে মনিটাইজেশন পাওয়া সহজ।
৬। আপনার সাইটের ডিজাইন ও কাঠামো সঠিক আছে কি? কোন Underconstruction সাইটে গুগল মনিটাইজেশন দেয় না।
৭। আপনার রুট সাইটে ‘robot.txt’ ও ‘sitemap.xml’ ফাইল ইম্পোর্ট করা আছে কি? না হলে আজই আপলোড করুন।
৮। আপনার রুট সাইটে ’ads.txt’ ফাইলটি আপলোড করা আছে কি? না হলে আপলোড করুন।
৯। কয়েকটি পেজ যেমন- about, contact us, privacy policy ইত্যাদি আছে কি? না থাকলে তৈরি করতে পারেন।
১০। আপনার সাইটের নেভিগেশন মেনু সঠিকভাবে দেখা যায় কি? এটা অনেক জরুরি ভিজিটরদের জন্য।
১১। আপনার সাইটে অন্যান্য কোন বিজ্ঞাপন থাকলে সেগুলো সরান।
১২। আপনার সাইটে পর্যাপ্ত পোষ্ট আছে কি? নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল-
সাধারনত মনিটাইজেশন পাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট পোষ্ট এর সংখ্যা নেয়। কারন এমনও ব্লগার আছে যারা মাত্র ৩টা পোষ্ট করে মনিটাইজেশন পেয়ে গেছে। আমি পেয়েছি ২১ দিনে। অনেকে ভবে যে সাইটের বয়স ৩মাস হতে হবে, পোষ্ট ১০০ ইত্যাদি এগুলো সঠিক নয়।
তবে মনিটাইজেশন এর আদর্শ হিসেবে- আপনার সাইটে অন্তত ১৫০০+ ওয়ার্ড এর ২-৩ টা ইউনিক কন্টেন্ট লিখতে পারেন ও সাথে ১৫-২০টি ৬০০+ ওয়ার্ড এর আর্টিকেল। তবে অবশ্যই এসইও এর কথাটা মাথায় রাখবেন। কারন সাইটের কয়েকটি কিওয়ার্ড র্যাংক করলে মনিটাইজেশন পেতে সহজ হয়।
আশাকরি উপরের এই ১২টি পয়েন্ট যদি সঠিকভাবে আপনি পালন করেন তাহলে আপনার সাইটটি মনিটাইজেশন এ্যাপ্লাই করার যোগ্যতা অর্জন করবে।
9. গুগল এডসেন্স ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন রিকোয়েস্ট
আপনারা হয়তবা গুগল এডসেন্স এর নাম শুনেছেন। গুগল এডসেন্স বিশ্বের নাম্বার #১ এ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্লাটফর্ম। আপনাদের যদি গুগল এডসেন্স এর একাউন্ট থেকে থাকে তাহলে তার মাধ্যমেই আপনার সাইটের মনিটাইজেশন এ্যাপ্লাই করতে পারবেন। সতর্কতাঃ একটার বেশি এডসেন্স একাউন্ট খুলবেন না তাহলে যেকোন সময় একাউন্ট লক হয়ে যেতে পারে।
উপরের দেখানো চিত্র অনুসারে আপনি আপনার সাইটের এ্যাড্রেস টাইপ করে মনিটাইজেশন এর জন্য এ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এ্যাপ্লাই করার সাথে সাথে আপনাকে একটা এডসেন্স কোড প্রদান করা হবে। সেই কোডটি আপনার সাইটের <head> ট্যাগ এর মধ্যে পেস্ট করতে হবে।
সাধারনত সাইট মনিটাইজেশন চেকিং এর জন্য গুগল ১৪ দিন এর মত সময় নেয় কিন্তু সাইটের সবকিছু সঠিক থাকলে ৩-৪ দিনের মধ্যে হয়ে যায়।
10. মনিটাইজেশন পরবর্তি কিছু পরামর্শ
বন্ধুরা, আমরা একে একে সর্বশেষ পয়েন্টে চলে আসলাম। আমি এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব মনিটাইজেশন পাওয়ার পরবর্তি কিছু গাইডলাইন।
অনেকেই মনে করে যে, আমি মনিটাইজেশন পেয়ে গেছি এখন যা খুশি তাই করব। একদমই না!
১। মনিটাইজেশন পাওয়ার পরে আপনার সাইটে যদি গুগল এডসেন্স এর নীতিমালা ভঙ্গ করে এমন কিছু পাবলিশ করা হয়। তাহলে যেকোন সময় আপনার সাইটের জন্য চিরতরে মনিটাইজেশন ব্লক হয়ে যেতে পারে। তখন শত চেষ্টা করেও আর মনিটািইজেশন পাবেন না। তাই সর্বদা নিজের কন্টেন্ট পাবলিশ করুন।
২। আপনার নিজের এ্যাডে নিজে কখনও ক্লিক করবেন না। অন্যকেও ক্লিক করার জন্য বলবেন না। এতে করে কিছু সময় বা কিছু দিনের জন্য এ্যাড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩। মনিটাইজেশন পাওয়ার পর বেশি বেশি পোষ্ট লিখুন ও পাবলিশ করুন। সপ্তাহে অন্তত ২-৩টি পোষ্ট করুন।
৪। সাইটের এসইও চালিয়ে যান।
৫। সাইটের মনিটাইজেশন কোড কখনও পরিবর্তন বা রিমুভ করবেন না।
পরিশেষে কিছু কথাঃ
আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যে একটা সাইটের জন্য মনিটাইজেশন বা গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় কি এবং কিভাবে এ্যাপ্লাই করতে হয় তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। আসলে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ইনকাম যেটাই বলেন, এর কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই। আপনাকে শিখতে হবে জানতে হবে বেশি বেশি।
আর ইনকাম! এটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি শুধু ডেডিকেটেডভাবে লেগে থাকেন মাত্র ৬ মাস। আমার মনে হয় ৬ মাস পরে আপনার আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগবে না। এমন অনেক ব্লগার আছে যে মাত্র ৪/৫ মাসের মধ্যেই ২০/২৫ হাজার টাকা ইনকাম করছে এই বাংলা ব্লগ সাইট থেকেই। আবার অনেকে আছে ১/২ বছর হয়ে গেছে এখনও ৫/৬ হাজার টাকা পায় মাসে।
এটা নির্ভর করে আপনার সাইটের এসইও কেমন করা হচ্ছে। এসইও এবং কিওয়ার্ড রিসার্চ যদি সঠিকভাবে করতে পারেন আপনার সাইটের ভিজিটর খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আর ভিজিটর যত ইনকাম হবে তত।