কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায়? এই প্রশ্নটি প্রায়ই অনেকের মুখে শুনে থাকি। আসলে যারা একদম শুরু থেকে প্রাথমিক ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই লেখাটা অনেক উপকারী হবে। তাই সম্পূর্ন লিখাটা পড়ার অনুরোধ রইল!
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন শিখবেন?
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আলোচনা শুরুর পূর্বে আমরা জেনে নেই, ডিজিটাল মার্কেটিং কেন শিখবেন?
এখন সাল ২০২৪, সারা বিশ্ব এখন ডিজিটালের চাদরে আটকা পরে আছে। এই ডিজিটাল সেক্টরের সবথেকে জনপ্রিয় যে ট্রেন্ডিং টপিক সেটা হল ডিজিটাল মার্কেটিং। মানুষ এখন যেকোন পণ্য ক্রয় করার আগে ইন্টারনেটে ওই পন্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে বুঝে তারপর ক্রয় করে থাকে। এছাড়াও মানুষ এখন দোকানে ঘুরে ঘুরে পন্য না কিনে, অনলাইন থেকেই বেশিরভাগ মানুষ পন্য কেনা কাটা করে থাকে।
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হন, আপনার উচিত ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। চলুন আমরা আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেই, ডিজিটাল মার্কেটিং কেন শিখবেন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাগুলো কি?
- বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এই সংখ্যাটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষ যত বেশি ইন্টারনেটে ব্যবহার করবে তত বেশি মানুষের সামনে আপনি আপনার পণ্যের মার্কেটিং করতে পারবেন। অতএব, ইন্টারনেটে পণ্যের মার্কেটিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব কতটুকু তা আপনি আমাদের উপরের আলোচনা পড়লেই বুঝতে পেরেছেন।
- বিশ্বে প্রায় ৫.১১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এই সংখ্যা আরও দ্রুত গতির সাথে বেড়ে চলেছে। অনেক মানুষ আছে যারা একাধিক মোবাইল ব্যবহার করেন। এই মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করেই একজন ডিজিটাল মার্কেটার তার পন্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন ক্রেতা বা সেবা গ্রহনকারীর সামনে হাজির করেন। এছাড়াও, প্রায় সকল মোবাইল ব্যবহারকারীই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। তাই এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাও তত বাড়বে।
- আপনি একটি সার্ভে রিপোর্ট জেনে অবাক হবেন যে, প্রায় ৮৪% বিক্রেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেই ক্রেতাকে খুজে নেন। আরো একটি সার্ভে রেজাল্ট দেখিয়েছে যে, সারা বিশ্বে ৫৫% মানুষ যেকোন পন্য ক্রয়ের জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাদের পছন্দের পণ্য সম্পর্কে তথ্য এবং রিভিউ জানতে চায়। আর ক্রেতার কাছে যে বিক্রেতার রিভিউ ও প্রেজেন্টেশন পছন্দ হবে তার কাছ থেকেই অনলাইনের মাধ্যমেই পন্য বা সেবা ক্রয় করে ফেলে।
- ৪৩% ই-কমার্স ক্রেতাই গুগলে সার্চ করে তাদের পছন্দের ই-কমার্স ওয়েবসাইটে আসে। বিশ্বে প্রায় ৫১% ক্রেতা তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা অনলাইন থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করে থাকে। এই সংখ্যাটিও ক্রমেই দিন-দিন বেড়েই চলেছে।
- ৭০% ক্রেতাই যেকোন পণ্য কেনার পূর্বে ইন্টার্নেটে সার্চ দিয়ে সেই পণ্য সম্পর্কে যাচাই বাছাই করেন। পণ্যটি পছন্দ হলে সাথে সাথেই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে ফেলেন। আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে ৮২% ক্রেতা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই বিক্রেতার সাথে তাদের লাইভ চ্যাটের সাথে যুক্ত হয়ে যান ও কথা বলেন।
আশাকরি উপরের আলোচনা থেকে এটুকু বুঝতে পেরেছেন যে, কেন ডিজিটাল মার্কেটিং শিখবেন এবং বর্তমান সময়ে এর মার্কেট চাহিদা কেমন। এই ডিজিটাল যুগে, ডিজিটাল মার্কেটে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ভাবতে হবে।
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা কিন্তু বসে নেই। তারা ব্যবসাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সর্বাত্বক চেষ্টা করে চলেছেন। Coca-Cola, Unilever, Nestlé এর মতো বড় বড় কোম্পানীগুলোও কিন্তু বেশ প্রতিযোগীতার সাথেই বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়াতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায়?
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে আসলে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড বা শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। এই ভুল ধারনাটি অনেকের মধ্যেই বিরাজ করে যে, ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে অবশ্যই টেকনিক্যাল পারসন হতে হবে; তা না হলে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যাবে না। আমি বলবো এটা সঠিক নয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে বিরাজ করে অনেকগুলো অ্যালগরিদমের উপর। যা আপনি কোন বই পুস্তকে পরে শুধুমাত্র শিখতে পারবেন না। এটা আপনাকে লাইভ কাজ করে শিখতে হবে। এবং এর প্রতিটি সেক্টর খুব প্রতিযোগীতাপূর্ন।
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বড় একটি সেক্টর এবং এর মধ্যে আরো অনেকগুলো সাব-ক্যাটাগরি আছে, যেমন – সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটি, ইমেইল মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং, এসইও মার্কেটিং ইত্যাদি।
এখন আসি শেখার বিষয় নিয়ে, কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায়? আপনার আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি যদি দৃঢ় হয় তাহলে আপনি বিভিন্ন উপায়ে শিখতে পারবেন।
১। ফ্রি মেথড এ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা
যেমন – অনলাইনে ফ্রি ইউটিউবের মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন অনলাইন ট্রেনিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে। এছাড়াও বড় বড় কিছু ডিজিটাল স্পেশিয়ালিস্ট মার্কেটার আছে যারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আপডেট প্রদান করেন, তাদের থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এবং দ্বিতীয় যে মেথড সেটা হল পেইড মেথড।
২। পেইড মেথড এ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা
টাকা খরচ করেও ডিজিটাল মার্কেটিং শিখা যায়। আপনি যদি কোনো ট্রেনিং সেন্টার বা কোন অনলাইন কোর্স ক্রয় করে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান সেটাও পারবেন। একটি ভাল ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সের ফি অনেক ব্যয়বহুল, সেটা ৪০-৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও অনলাইনে আপনি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেও কোর্স করতে পারবেন। তবে, অবশ্যই কোর্সের রিভিউ ও কোর্স আউটলাইন দেখে তারপর জয়েন করবেন।
শেষকথাঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি সেক্টর, যেখানে আপনি প্রতিটা ধাপে-ধাপে নতুন কিছু শিখতে পারবেন। তাই আপনি এই ২০২৪ এ দাড়িয়ে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা যায় চিন্তা না করে, ঝাপিয়ে পড়ুন। আমি আপনাকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি…. ইনশাল্লাহ্ এই সেক্টরে আপিনি কাজ করতে থাকলে সফল আপনি হবেন। ধন্যবাদ!