অপ্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ জায়ান্ট গুগল সেবা প্রদানে কেন বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আছে?
আনিশার আগামীকাল পরীক্ষা, কিন্তু এখনো তার প্রেজেন্টেশন তৈরি হয়নি। কিভাবে করবে কোথা থেকে শুরু করবে কিছুই বুঝছে না। তাকে কেউ একজন বললো গুগল থেকে সাহায্য নিতে। কিন্তু সে কখনো গুগল ব্যবহার করেনি। এখন তার মাথায় একটি আইডিয়া আসলো!
সে দৌড়ে চলে গেল আম্মুর কাছে এবং বললো আমাকে গুগল বের করে দেও। এখন দেখুন জাদু… সে তার প্রেজেন্টেশনের মূল কথাটা লিখে গুগলে সার্চ করলো, মূহুর্তের মধ্যেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডে হাজারো আইডিয়া তার সামনে চলে এলো।
তার কপাল থেকে বিষন্নতার ছাপটি কেটে গেল এবং সে ধীরে ধীরে তার প্রয়োজনীয় লেখা এবং ছবিগুলো অনলাইন থেকে সংগ্রহ শুরু করলো। মাত্র এক ঘন্টার মাথায় তার প্রেজেন্টেশন রেডি, আনিশা অনেক খুশি তার এই নতুন অভিজ্ঞতার জন্য।
কিন্তু “সার্চ ইঞ্জিন” মানেই যে শুধু গুগল, তা নয়। এ যেন এক দানব, যে আমাদের ডিজিটাল জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। চলুন দেখে নিই, সেবার ক্ষেত্রে গুগল কেন সিংহাসনে বসে আছে। কিছু দারুণ তথ্য দিয়েই শুরু করা যাক।
গুগল সেবা: সব শুরু হয় গুগল সার্চ থেকেই
গুগলের সেবার সংখ্যা বলে শেষ করা যাবে না, অনলাইনে গুগলের হাজারো সেবা রয়েছে যা সম্পূর্ন বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তবে, সকল সেবা গ্রহনের দরজাটা এই গুগল সার্চ। যা প্রতিদিন বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ ব্যবহার করে থাকে তাদের অনুসন্ধান চালানোর জন্য।
- প্রাণকেন্দ্র: প্রতি বছর গুগল ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সার্চ প্রসেস করে, যা ভাবাই যায় না [সূত্র: Search Engine Land]।
- গতির গুরুত্ব: গুগলের সার্চ রেজাল্ট আসে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতর। আপনি ভাবতেই পারবেন না যে এর গতিটা কত, তথ্য পাওয়া যেন চোখের পলকেই! [সূত্র: Google Investor Relations]।
- প্রতিনিয়ত উন্নতি: গুগলের অ্যালগরিদমের উন্নয়ন চলছে অবিরাম। লক্ষ্য একটাই – আরও উপযুক্ত, সহজ এবং মানসম্মত সার্চ রেজাল্ট দেওয়া।
সার্চ বারের ওপারে: গুগলের বিশাল জগৎ
- Gmail (গুগলের শক্তিশালী ইমেইল): Gmail-এ ১.৮ বিলিয়নেরও বেশি অ্যাক্টিভ ব্যবহারকারী রয়েছে, যা একে বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় ইমেইল সার্ভিস বানিয়েছে [সূত্র: Statista]
- Maps (অনলাইন ডিজিটাল কম্পাস): গুগল Maps প্রতি মাসে বিপুল সংখ্যক মানুষকে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পথ দেখায়, এটি ন্যাভিগেশন এবং স্থানীয় ব্যবসা খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী [সূত্র: Google Maps Blog]।
- অ্যান্ড্রয়েড (মোবাইল জগতের আধিপত্য): পৃথিবীর ৭০% স্মার্টফোনই চলে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপ ও সার্ভিসের এক বিশাল জগৎ তৈরি করে দিয়েছে [সূত্র: StatCounter]।
- YouTube (ভিডিওর রাজা): অনলাইন ভিডিও মানেই YouTube। প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন লগ-ইন করা ব্যবহারকারী অসীম সময় ধরে ভিডিও দেখে যান। এবং প্রতিদিন প্রতিসেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ নতুন ভিডিও আপলোড হয় এই ইউটিউবে। [সূত্র: YouTube]।
এছাড়াও এমন হাজারো সার্ভিস আছে যা লিখতে বসলে লিখে শেষ করা যাবে না। যেমন- গুগল অ্যানালিটিক্স, গুগল অ্যাডসেন্স, গুগল কনসোল, গুগল ট্যাগ ম্যানেজার, গুগল অ্যাড, গুগল ফটো, গুগল মিট, গুগল জেমিনি, গুগল ক্লাউড, গুগল সাইট ইত্যাদি।
নতুনত্বের প্রতি অঙ্গীকার
গুগল নিজের সাফল্যে আত্মতুষ্টিতে বসে থাকতে চায় না। ক্রমাগত তাদের চেষ্টা সীমানা পেরোনোর জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে:
- ক্লাউডের শক্তি: গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম হলো ক্লাউড কম্পিউটিং-এর বড় খেলোয়াড়, বিভিন্ন ব্যবসাকে টুলস এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়ে সাহায্য করছে এই গুগল ক্লাউড।
- AI জগতের পথিকৃৎ: গুগল AI আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চের পথপ্রদর্শক। মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এ এরা বড় বড় সাফল্য দেখিয়েছেন।
- স্বপ্ন বড় দেখে: গুগল সর্বদা বড় স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে। সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি (Waymo) থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতে উদ্যোগ (Calico) – নতুন নতুন সীমানা ছোঁয়ার প্রচেষ্টা চলছেই।
সেবার পিছে রয়েছে কিছু অপ্রিয় সত্য
দেখুন, বিশ্বের কেউই আপনাকে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া ফ্রি কিছু দিবে না। ঠিক গুগলও তাদের এত মিলিয়ন মিলয়ন ডলার খরচ করা সেবা আপনাদের সম্পূর্ন ফ্রি করে দিয়েছে তার অবশ্যই কোন না কোন কারন রয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী মানুষের সকল তথ্য।
কে কখন ঘুমাচ্ছে? কে কতটা সময় কোন অ্যাপ ব্যবহার করছে? কে কোন জায়গায় ট্যুরে বেড়াতে গিয়েছে সকল তথ্য গুগলের নখদর্পনে। এসকল তথ্যকে পুজি করেই গুগল বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে।
সবথেকে অবাক বা বিষ্ময় লাগে একটি কথা চিন্তা করে? একটু ভাবুনতো! যদি গুগলও কখনো তাদের সার্চ করাটা সাবস্ক্রিপশন করে ফেলে তাহলে কি হবে? যে ফ্রি দিনে ৩টির বেশি সার্চ করা যাবে না। কি হাসি পাচ্ছে?
এটা হতেও পারে। কারন ব্রিটিশরা আমাদের ফ্রি বিড়ি খাওয়াই অভ্যাস করিয়ে দিয়েছে এখন মানুষ জমি বিক্রি করে হলেও বিড়ি খাবে। এটাই বাস্তবতা! যাইহোক আমার এই পোষ্টটি যেন…..গুগলের কেউ না দেখে তাহলে মনে ভাবনা চলে আসতেও পারে😃।
শেষ কথা
তথ্য খোঁজা, যোগাযোগ, পথ চলা, শেখা, এবং বিনোদন – এই সব ক্ষেত্রে গুগল কিভাবে আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তাদের সর্বব্যাপী সেবা, লাগাতার নতুনত্ব আনা, এবং ব্যবহারকারীকে সবসময় প্রাধান্য দেওয়া এদেরকে অনন্য করে তুলেছে।
প্রযুক্তির জগৎ হচ্ছে বদলের জগৎ, কিন্তু আগামীতেও গুগল বোধহয় আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়েই থাকবে। এই ব্লগ পোস্টে কিছু সম্ভাব্য সমালোচনা বা গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে, জানাতে পারেন। ধন্যবাদ!