ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন?
কেউ ভাবছে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবে, কেউবা ভাবছে ফ্রিল্যান্সিং করবে, আবার কেউ ইউটিউবে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাচ্ছে। সেই সাথে কেউ কেউ ভাবছে ওয়েব ডেভলপার হয়ে ইনকাম করবে মোটা অংকের টাকা।
এসবের পাশাপাশি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। যার ফলে বিশ্বজুড়ে ওয়েব ডেভেলপারদের চাহিদা রয়েছে অনেক। ভবিষ্যতেও এ কাজের চাহিদা আরও ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। আর তাই অনেক তরুণ-তরুণীই ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে দিনে দিনে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শুরুটা কীভাবে করতে হবে বা কী কী বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে বা ভালো জ্ঞান রাখতে হবে, সে বিষয়ে পরিস্কার ধারণা না থাকায় অনেকেই ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ওয়েব ডেভেলপার বর্তমানে খুবই চাহিদা সম্পন্ন একটি পেশা। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমানে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। দিন দিন ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়ছে। এ পৃথিবীতে এক বিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলো মেইনটেইনের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে দক্ষ ওয়েব ডেভেলপারের। তথ্য প্রযুক্তির যুগে, ক্যারিয়ারের জন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অন্যন্য পেশা থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ঘরে বসেই টাকা উপার্জন করা যায়। ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে খুব সহজেই চাকরি পাওয়া যায়।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে ইন্টারনেট বা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক গুলোর জন্য ওয়েবসাইট বা এপ্লিকেশন তৈরি করা। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলতে ওয়েবসাইট তৈরি করাকে বোঝায়। একজন ওয়েব ডেভলপার মূলত ওয়েব ডিজাইন এর কাজ করে থাকে।
একটি ওয়েবসাইটে কি কি তথ্য থাকবে, কোথায় কি কি তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, ওয়েবসাইটের কোথায় থেকে ওয়েবসাইটটি লোড হবে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এসব বিষয়। এই কাজগুলো সম্পাদন করা হয়ে থাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে। মোট কথা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো, ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট মিলিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করা।
এটা এমন একটা কাজ যে কাজটি যেখানে ইচ্ছে বসে করা যায় যা পর্দার আড়ালের কাজ বলে অভিহিত।এক্ষেত্রে একজন ওয়েব ডেভলপারকে ক্লায়েন্ট সাইড ভাষা ও সার্ভার সাইড ভাষা একসাথে করে একটি সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়।
কেনো শিখবেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন হবে? কেনো শিখবেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট? তা জানার আগে নিজে নিজে ভাবুন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ আগ্রহ বা ইচ্ছা আছে কিনা! আগ্রহ না থাকলে যত সহজ সেক্টরই হোক না কেন, কোন সফলতা আসবে না।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজ শেখায় নিজের আগ্রহকে গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি। বর্তমানে যেহেতু অনলাইন ওয়েবসাইটের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং প্রায় সকলেই ওয়েবসাইটের পেছনে ছুটছে সেহেতু বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে এই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজের চাহিদা তুলনামূলক হারে বাড়তেই থাকবে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট উচ্চ আয়ের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি পেশ হতে চলেছে। এটলিষ্ট কাজের মূল্য নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না। তবে কাজ না শিখে যদি সারাদিন ইনকামের কথা চিন্তা করেন তাহলে সেটি হবে বোকামি। কাজ না জেনে অন্তত এই সেক্টরে কারো কোনো গতি হবে না। ডিজিটাল যুগে এক্সপার্টদের ভিড়ে আপনি বলতে গেলে হারিয়েই যাবেন।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ কি?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন হবে তা জনার আগে আমাদের জানতে হবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এ কি জাতিও কাজ করা হয়? ওয়েব ডেভেলপমেন্ট একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রক্রিয়া বিধায় কোডিং এবং প্রোগ্রামিংসহ যাবতীয় সমস্ত কাজ এর আন্ডারে করতে হয়। চলুন ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কিছু কাজের সাথে পরিচিত হয়ে নেইঃ
১। ডাটাবেস
একটি ওয়েবসাইটের ডাটাবেস এর অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ডাটাবেসে একটি ওয়েবসাইটের সকল ফাইল জমা রাখা হয় বলে ডেভলপারেরা এটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। রিলেশনাল ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরডিবিএমএস) ব্যবহার করে একজন ওয়েব ডেভলপার এই ডাটাবেসের কাজ করে থাকে।
ওয়েবসাইটের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় এই ডাটাবেস একটি ওয়েবসাইটের তথ্য পুনরুদ্ধার, সংগঠিত, সম্পাদনা এবং সংরক্ষণের কাজ করে। ওয়েব ডেভলপারদের দ্বারা তৈরি করা ডাটাবেসটি একটি সার্ভারে চলে গেলে তখনি একটি ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে পাওয়া বা দেখা যায় এবং ব্যবহারকারীরা তা ব্যবহার করার সুযোগ পায়।
২। সার্ভার-সাইড
ফ্রন্টএন্ড কোড আকারে প্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে কাস্টমাইজড করার কাজ থাকে এই সার্ভার-সাইড পয়েন্ট অংশে। সার্ভার-সাইড স্ক্রিপ্টিং, বা ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট একটি ওয়েবসাইট এর পেছনকার গল্প তৈরি করে থাকে। ব্যাকএন্ড হচ্ছে কোনও ওয়েবসাইটের এমন একটি পার্ট বা অংশ যা কখনোই পাবলিকলি শো করা হয় না বা ব্যবহারী কখনোই তা দেখতে পায় না। ডেটা সংরক্ষণ এবং সেই সব কালেক্ট করার জন্য সুচারুভাবে ওয়েবসাইটটিকে পরিচালনার জন্য একটি ওয়েবসাইট এর এই সার্ভার-সাইড এর কাজ করা হয়ে থাকে।
ক্লায়েন্টের সাথে সরাসরি যোগাযোগ অথবা ব্যবহারকারী যদি সরাসরি ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সুযোগ পেতে চায় তবে একজন ওয়েব ডেভলপারকে এই ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয় কাজ অর্থ্যাৎ সার্ভার-সাইড এর কাজ করতে হয়। একটি সাইডের কন্টাক্ট পেইজটি এই সার্ভার-সাইড দিয়েই তৈরি করা হয় এবং এটি তৈরি করার ফলে ব্যবহারকারী সহজেই ওয়েবসাইট কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
৩। ক্লায়েন্ট সাইড
স্ক্রিপ্টিং বা ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্টের সাহায্যে এই ক্লায়েন্ট সাইড তৈরি করে থাকে একজন ওয়েব ডেভলপার। এটি একটি কোড এবং যা ওয়েব ব্রাউজারে কার্যকর করা গেলে ব্যবহারকারী একটি ওয়েবসাইটে কি কি দেখতে পায় তা নিশ্চিত হয়! বিশেষ করে লেআউট, ফন্ট, রঙ, মেনু এবং প্রয়োজনীয় পেইজগুলি এই ক্লায়েন্ট সাইডে সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে কতদিন লাগে?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার সময় কতটা লাগতে পারে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে যে শিখবে তার উপর। সে যদি সবকিছু দ্রুত বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে সময় কম লাগবে। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান তবে আপনাকে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে সময়ের সাথে।
নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে আপডেট থাকার কারনে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন আপডেট অনুযায়ী কাজ শেখা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত গুগলে যেসব আপডেট আসে সেগুলির দিকে নজরদারিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এতে করে ক্লায়েন্ট যেমন সন্তুষ্ট হবে আপনার কাজের মানও তেমন বাড়বে।
তবে ঠিকঠাকভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে ৩ মাস থেকে প্রায় ১ বছরের মত বা এর চেয়ে বেশিও সময় লেগে যেতে পারে৷ এটি আপনার শিখতে পারার দক্ষতার উপর নির্ভর করবে৷
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে টাকা আয় করার উপায়
সর্বদা আমাদের মনে সে প্রশ্ন টা উকি দেই টা হল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন হবে? একজন ওয়েব ডেভেলপার কেবল একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটা কিন্তু নয়। ওয়েবসাইট ডিজাইন করে, নতুন কোন ওয়েবসাইট তৈরি করে সে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারবে এবং পাশাপাশি ইনকামের জন্য আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে একজন ওয়েব ডেভেলপারের।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আয় করার আরও অনেক আকর্ষণীয় উপায় রয়েছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলোঃ:
- বিভিন্ন জনপ্রিয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ।
- একজন ফ্রিল্যান্সার ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে আয়ের সুযোগ।
- সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠার করার সুযোগ।
- ওয়েব হোস্টিং এর বিজনেস এর মাধ্যমে আয় করার সুযোগ।
- নিজস্ব পণ্য বিক্রি করে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ।
- নতুন নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করে তা থেকে আয় করা যায়।
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে আয়ের সুযোগ রয়েছে।
- ওয়েবসাইট মনিটাইজেশনের করার মাধ্যমে আয় করা যায়।
- স্পন্সারশীপের মাধ্যমে ইনকামের সুযোগ রয়েছে।
- সেলস এন্ড স্পেস এর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ ইত্যাদি।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে কত টাকা আয় করা যায় তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি মাসে কয়টি কাজ পাচ্ছেন তার উপর। আপনি যদি কোনো প্রজেক্ট অর্ডারই না পান তবে ইনকামের আশা করা তো পুরোপুরি বোকামি। একজন জুনিয়র ওয়েব ডেভলপার শুরুতেই মাসে গড়ে ৮ লক্ষ টাকা ইনকাম করে।
কি? অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা!
তবে এটা আমাদের দেশীয় প্রাইজ না। এই পরিমাণ পেমেন্ট সাধারণত বিদেশীরা পেয়ে থাকে। আমি জাস্ট ধারণা থাকার জন্য এটি জানিয়ে দিলাম। তবে বাংলাদেশে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করে আপনি মাসে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা বা এর বেশিও আয় করতে পারবেন। যদিও এই আয়টি কেবল নতুনদের জন্য। যারা অনেক বছর আগে কাজ শিখে নিজেদের দক্ষ করে তুলেছে তারা আরো বেশি আয় করছে।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট একটি সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তৈরির মাধ্যম। যেখানে আপনি আপনার সেরা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও ব্যক্তিগত এর সাথে আগ্রহী মনোভাবকে পুঁজি করে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আপনিও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে মাসিক একটি স্বচ্ছল আয় করতে পারেন যা আপনার স্বপ্ন পূরনে এগিয়ে দেবে।