ফ্রিল্যান্সিং সফলতা না পাওয়ার ৮টি প্রধান কারন!

TechPoth
11 Min Read

ফ্রিল্যান্সিং সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং আসলে একটি সাধনার বিষয়, কেউবা এই সাধনার ফল ৩ মাসে পাই, আবার কেউবা ৬ মাসে। আবার অনেকে আছে বছরের পর বছর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কোন রকম সফলতা আসছে না।

আমাদের আজকের এই অনুচ্ছেদটি তাদের জন্য সাজানো হয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কিন্তু কোন রকম সফলতার দেখা পাচ্ছে না। আমরা আপনাদের সামনে আজ এমন কিছু বিষয় তুলে ধরবো যা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একজন ফ্রিল্যান্সারকে তার নির্দিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছাতে বাধা প্রদান করছে।

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টিভি বা নিউজ মিডিয়ায় ফ্রিল্যান্সারদের সফলতার অনেক গল্প শুনে থাকি যারা কিনা হাজার হাজার ডলার মাসে ইনকাম করে থাকে, কিন্তু আপনি কি জানেন ? ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফলতার থেকে সফলতা না পাওয়ার গল্পই অনেক বেশি। কি…. হতাশ হলেন! আসলে এটাই বাস্তবতা !

- Advertisement -

যাই হোক চলুন শুরু করা যাক!

আমরা অনুচ্ছেদটি শুরু করার পূর্বে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন কথা দিয়ে শুরু করতে চাই। আমি প্রথমেই একটি শব্দ বলে শুরু করেছিলাম ‘সাধনা’, যারা আমরা এই সাধনা বা ধৈর্য ধারন করতে জানি না বা অল্পতেই হতাশ হয়ে পরি; তাদের জন্য এই সেক্টরটি আসলেই অনেক কঠিন। তাই আমার পরামর্শ, আপনি যদি একবার ফ্রিল্যান্সিং এর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে থাকেন, তাহলে কাজ করতে থাকেন সফলতা আপনার আসবেই।

পড়ুনঃ

ফ্রিল্যান্সিং সফলতা না পাওয়ার প্রধান কারনগুলোঃ

বর্তমান সময়ে বেশি মানুষের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বা অনলাইন আয়ের দিকে ঝুকে পড়ার একটা প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। যার প্রধান কারন হতে পারে অনিশ্চিত প্রাইভেট জব সেক্টর। কারন করোনার পর থেকে মানুষ বুঝেছে যে আসলে আমরা যেই ৯টা-৫টা জবটাকে একটি সিকিউর জীবিকা বলতাম এটা আসলে ভুল।

তাই অনলাইন আয় একটি স্বাধীন ও লাভজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারন এখানে নেই কোন বস, নেই কোন কাজের চাপ। আপনি যখন খুশি কাজ করতে পারেন আর মন না চাইলে কাজ নাও করতে পারেন। শুধুমাত্র সঠিক সময়ে প্রজেক্ট বা কাজ জমা দিলেই হলো।

- Advertisement -

যাইহোক, আমরা আজ আপনাদের সাথে এই ফ্রিল্যান্সিং সফলতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন আলোচনা করতে চলেছি। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে আসলে আমাদের অনেকের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে; যার কারনে সফলতার থেকে বিফলতার গল্পই অনেক বেশি। তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে ফ্রিল্যান্সিং সফলতা না পাওয়ার ৮টি প্রধান কারন বর্ননা করবো। নিচে প্রতিটা বিষয় সম্পর্কে ধাপে ধাপে বর্ননা করা হলঃ

১. সিদ্বান্তহীনতার অভাব

ফ্রিল্যান্সিং সফলতা না পাওয়ার একটি প্রধান কারন হল সিদ্বান্তহীনতার অভাব। আমরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্বে অনেকেই এই সিদ্বান্তহীনতায় ভুগে থাকি। একজন ব্যাক্তি যদি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রবেশ করার পূর্বেই সিদ্ধান্তহীনতায় পরে যায় যে, আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করবো কি করবো না এবং আমি কি পারবো কি পারবো না; তাহলেই আপনার জন্য এই সেক্টরটিকে বাছাই করা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে উঠবে।

তাই আপনি যদি নিজে থেকে নিশ্চিত থাকেন যে আমি ফ্রিল্যান্সিং করবো তাহলে আমার মতামত, আপনারা আজকে থেকেই যেকোন একটি বিষয় নির্বাচন করে তার উপর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন।

২. পরিপূর্ণ দক্ষতার অভাব

আমরা দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হল পরিপূর্ন দক্ষতার অভাব। এই বিষয়টি আসলে আমাদের অনেক ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে দেখা যায় যে সামান্য কিছু বই পুস্তক পড়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেয়। তাদের শুরুটা সুন্দর হলেও পরবর্তিতে তারা নানা রকম বাধার সম্মূখীন হয়ে থাকেন এবং সামনে আর এগিয়ে যেতে পারেন না।

দিন-দিন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের অনেক নিয়ম-নীতি পরিবর্তিত হচ্ছে তাই আমরা যারা সঠিকভাবে কাজ করতে চাই এবং ফ্রিল্যান্সিং সফলতা পেতে আগ্রহী তাদের জন্য আমাদের একটাই নির্দেশনা, আপনারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রবেশ করার পূর্বে অন্তত ৫/৭ দিন এই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ভালভাবে জানুন।

কারন আপনি যদি কোন একটি কাজ শুরু করার পূর্বে সেই কাজটি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে শুরু করেন তাহলে হয়ত আপনার কাজটি শুরু করতে কিছুদিন সময় বেশি লাগবে। তবে আপনার চলার পথটি অনেক সহজ হয়ে উঠবে। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে গেলে আপনাকে প্রতিনিয়ত অনলাইন মার্কেটের সাথে আপডেট থাকতে হবে- ”শেখার কোন শেষ নেই”।

- Advertisement -

৩. কাজে সিরিয়াস না হওয়া

আমরা প্রথমেই যে কথাটা দিয়ে শুরু করেছিলাম যে, সিদ্ধান্তহীনতার অভাব। এই বিষয়টি কাজে সিরিয়াস না হওয়ার সাথে অনেকটাই সম্পর্কিত। কারন অনেকেই হয়তবা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ডলার ডলার ইনকাম করার গল্প শুনে এখানে কাজ করতে আসে এবং তারা মোটেও কাজের প্রতি সিরিয়াস হয়না তাইতো তাদের ফ্রিল্যান্সিং সফলতার দেখা দেখা যায় না।

এজন্য এসকল ব্যাক্তিরা অধিকাংশই অতিদ্রুত কাজে প্রবেশ করে এবং খুব দ্রুতই কাজের প্রতি হতাশ হয়ে অসফলতার সাথে কাজ বন্ধ করে দেয়। এজন্য ফ্রিল্যান্সিং সফলতা পাওয়ার জন্য আপনার কাজের প্রতি সিরিয়াস থাকাটা অনেক বেশি জরুরী।

৪. ধৈর্যের অভাব

ফ্রিল্যান্সিং কাজ আসলে একটি সাধনার বিষয়। এই কাজ করতে গেলে আপনাকে যেমন পরিশ্রমী হতে হবে ঠিক তেমনই ধৈর্য ধারন করতে হবে। কারন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রধম দিকে কাজ পাওয়াটা অনেক কঠিন। কিন্তু একবার যদি আপনি কাজ পেয়ে যান তার পর আর কোন চিন্তা থাকে না।

- Advertisement -

এই প্রথম কাজ পেতেই অনেকের ৩-৬মাস সময় লেগে যায় আবার অনেকের ১ বছরেরও বেশি সময় লাগে। এর প্রধান কারন হল কাজের স্কিলসেট। এজন্য একজন ফ্রিল্যান্সারের ধৈর্য ধারন করার মত গুনাবলি থাকা আবশ্যিক।

আর যারা ধৈর্য ধারন করতে একদমই নারাজ তারা দেখা যায় মাত্র ১/২ মাস অথবা তার থেকে কম সময় চেষ্টা করে দেখে। এবং কোন রকম ফিডব্যাক না আসলে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটাই আমাদের বড় ভুল। আমার মতে কেউ যদি সঠিকভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখার পড়ে কাজ খুজতে থাকেন তাহলে ৩/৪ মাসের মধ্যেই সে একটি ভাল ফলাফল পেয়ে যাবে।

৫. সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা

বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য আছে- ”আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী”। এরমানে হচ্ছে কোন বিষয় যদি দেখতে সুন্দর না হয় তার প্রতি মানুষের আকর্ষন কম থাকে। এজন্য আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার পূর্বে আপনার প্রফাইলটিকে অনেক সুন্দরভাবে পরিপূর্নরুপে সাজাতে হবে।

এছাড়াও আপনার উপস্থাপনার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এমন অনেক ঘটনা আছে যে, কোন একজনের কাজের স্যাম্পলটা ভাল ছিলনা তবে উপস্থাপনা ভাল হওয়ার কারনে কাজটি পেয়ে যায়।

আপনাদের জন্য সবথেকে ভাল হবে আপনারা যদি আপওয়ার্ক বা ফাইভারে গিয়ে টপ ফ্রিল্যান্সারদের প্রফাইলে একটু ঠু মেড়ে আসুন। এর ফলে আপনাদের অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারনা হয়ে যাবে।

- Advertisement -

৬. ইংরেজিতে দুর্বল হওয়া

আমি প্রায়ই একটি প্রশ্ন শুনে থাকি যে, ভাইয়া আমিতো তেমন ইংরেজি পারি না তাহলে আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো?

দেখুন, আমাদের এশিয়া মহাদেশের কারো প্রধান ল্যাঙ্গুয়েজই ইংরেজী নয়। তবে হ্যা কিছুটা বেসিক হাই-হ্যালো আপনাকে জানতেই হবে একজন ক্লায়ান্টের সাথে কমিউনিকেশন করার জন্য। এছাড়াও আপনি যদি ইংরেজীকে তেমন পারদর্শী না হন তবে গুগল মামাতো আছেই তার সাহায্য নিতে পারেন।

আমাদের অনেকেরই ফ্রিল্যান্সিং সফলতা এই ইংরেজী কমিউনিকেশন দুর্বল হওয়ার কারনে হাতছাড়া হতে থাকে। কারন সাধারনত বেশির ভাগই আউটসোর্সিং বায়ার ইউরোপ বা আমেরিকার হয়ে থাকে এবং তারা জানে আমাদের ইংরেজি স্কিল সম্পর্কে। তবে তারা যদি কোন ভাবেই আপনাকে তার মনের ভাব বোঝাতে না পারে এবং আপনি যদি সেটা না বুঝে কাজ করতে থাকেন তাহলে বায়াররা একসময় কাজ বন্ধ করে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের খুজে নেয়।

এজন্য অবশ্যই আপনারা এই ইংরেজী কমিউনিকেশন এর দিকে নজর দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি সহজেই ইংরেজী শিখতে চান তাহলে টেন মিনিট স্কুল এর মুনজেরীন সাহীদ এর ঘরে বসে Spoken English কোর্সটি করে আসতে পারেন।

৭. প্রতিনিয়ত স্কিল ডেভেলপমেন্ট না করা

যারা আমরা ফ্রিল্যান্সিং করছি বা করবো চিন্তা করছি তাদের জন্য এই বিষয়টি জানা খুবই জরুরী যে, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই প্রতিনিয়ত স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করতে হবে। কারন টেকনোলজি দুনিয়া দৈনন্দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের হাওয়া যদি আপনি নিজের গায়ে না লাগাতে পারেন তাহলে দেখা যাবে একসময় আপনার কাজের চাহিদা অনেকাংশ কমে গেছে।

তখন নতুন কোন কাজ পেতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হবে। এই বিষয়টি আমাদের অনেকের মধ্যেই ঘটে। কারন যখন আমরা অনেক অনেক কাজ করে থাকি তখন ভুলেই যাই যে, আমরা একটি প্রতিদ্বন্দিতার মার্কেটে বসবাস করছি।

- Advertisement -

সাধারনত আপনি যে কাজটি করতে ২/৩ দিন সময় নেন, দেখা গেছে যে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা নতুন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই একই কাজটি ১ দিনে সম্পন্ন করে দিচ্ছে এবং খুবই কম খরচে। তাহলে বলুন কেন আপনার কাছ থেকে বায়ার বেশি মূল্যে বেশি সময়ে কাজটি করাবে। এটাই স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান উদাহরন।

তাইতো জানার এবং শিখার কোন শেষ নেই। বেশি বেশি নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন এবং আপনার বিফলতাকে সফলতায় রূপান্তর করুন।

৮. টাইম ম্যানেজমেন্ট এর অভাব

Time and tide wait for none – সময় এবং স্রত কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। এই প্রবাদবাক্যটা যেমন সত্য ঠিক তেমনই সময় বিক্রি করে যে আমরা পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা ইনকাম করি এটাও সত্য।

তাই আপনার সময়টি যেমন মূল্যবান, অপরদিকে যে আপনাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিচ্ছে তার সময়টিও একইরূপে মূল্যবান। তাইতো সময়ের সঠিক ব্যবহার করা শিখতে হবে।

আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে যদি কাজ করে থাকেন তাহলে এই বিষয়টি আপনাকে খুবই সতর্কতার সাথে পালন করতে হবে। কারন প্রতিটা কাজ বা প্রজেক্টের পেছনে একটি টাইমলাইন দেওয়া থাকে। তাই আপনি যদি আপনার কাজটি সঠিক টাইমে ডেলিভারি দিতে না পারেন তাহলে অনেক বড় ক্ষতির সম্মূখিন হতে পারেন।

অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা প্রায়ই এই বিষয়টি নিয়ে শক্তভাবে উপদেশ দেন, কারন এমন অনেক ব্যাক্তি আছেন যারা সঠিক সময়ে কাজ ডেলিভারি না দেওয়ার বায়ার তাদের নামে কমপ্লেইন করেছে এবং পরবর্তিতে তাদের একাউন্ট চিরতরে ডিজেবল করে দেয়া হয়েছে

তাইতো সঠিক নিয়মে ফ্রিল্যান্সিং করতে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

- Advertisement -

পরিশেষ কিছু কথা

আমরা যারা এই ফ্রিল্যান্সিংকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিতে চাই তাদের জন্য এই উপরের বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তাহলে আশাকরি আপনার কাছেও ফ্রিল্যান্সিং সফলতা খুব সহজেই ধরা দিবে।

Share This Article
Follow:
টেকপথ একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তিগত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে আপনি শিখতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউবিং, সফটওয়্যার সিকিউরিটি, গ্যাজেট তথ্য, টেক ট্রাবলশুটিং ইত্যাদি ।
Leave a comment

Leave a Reply