ডার্ক ওয়েব এমন একটি শব্দ যা আমরা শুনলেই মনে হয় ভয়ঙ্কর বা অশুভ কিছু। আসলেই এটা খুব ভয়ঙ্কর একটা অনলাইন জগত । যেখানে হাজারো বেআইনি কার্যকলাপ সংগঠিত হয় যেমন- চোরাচালান, চাইল্ড পর্ণ, হ্যাকিং ওয়েবসাইট, মাদক, অস্ত্র, মানব পাচার, এবং সন্ত্রাস ইত্যাদি।
ডার্ক ওয়েব এমন একটি অংশ যা সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ইনডেক্স করা হয় না। এটি টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কাজ করে, যা একটি সার্বজনীনভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত একটি বিতরণ করা সার্বজনীনভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য নেটওয়ার্ক।
টর নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের তাদের ট্র্যাফিকের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা তাদেরকে ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করতে এবং অ্যাননডামনেটেড থাকতে দেয়।
ডার্ক ওয়েব একটি বিপজ্জনক জায়গা হতে পারে, এবং এটিতে অ্যাক্সেস করার আগে ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ডার্ক ওয়েব কি
আপনি কি জানেন?
আমাদের ব্রাউজ করা পুরো ওয়েব ইন্টারনেট জগত ডার্ক ওয়েব এর তুলনায় খুবই সামান্য এক চিমটি মাত্র।
আরোকটু সহজ করে বলি, আমরা প্রতিনিয়ত যে ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে থাকি। এবং যে সাইটগুলো আমরা গুগলে সার্চ করলে খুজে পায়; যেমন- গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি এমন সব বড় বড় ইন্টারনেট সার্ভিস ডার্ক ওয়েব এর কাছে খুবই সামান্য।
আপনাদের কাছে বিষয়টি আরোকটু সহজ করে তোলার জন্য নিচের ছবিটি দেখুনঃ
ওয়াও সত্যিই! আসলেই যারা বিষয়টা জানতাম না তাদের মুখ থেকে এই শব্দটাই বের হবে। ডার্ক ওয়েব এত বড় একটা দুনিয়া।
চলুন বন্ধুরা তাহলে শুরু করা যাক আমাদের আজকের আলোচনা
“ক্লিয়ারনেট” কি?
আমরা প্রথমেই জানবো, ক্লিয়ারনেট আসলে কি। আমরা সাধারনত প্রতিদিন ইন্টারনেট এ ব্রাউজার এর মাধ্যমে যে সকল কন্টেট বা বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবে বা সহজেই অ্যাক্সেস করে থাকি কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়া এটিই হল ক্লিয়ারনেট। এটাকে ইন্টারনেটের প্রবেশদ্বারও বলা হয়।
উদাহরণ: ইউটিউব, ফেসবুক, উইকিপিডিয়া – এই সকল ওয়েবসাইট যেকেউ অ্যাক্সেস করতে পারে বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে।
লেভেল ১ “সারফেস ওয়েব”
এটি ইন্টারনেটের অনুসন্ধানযোগ্য অংশ। এর মধ্যে রয়েছে এমন ওয়েবসাইট বা তথ্য যা গুগল এ সার্চ করলে পাওয়া যায়। যদি ক্লিয়ারনেটটি ‘দরজা’ হয়, সারফেস ওয়েব একটি বসার ঘর। যেখানে অনেক জিনিস রাখা আছে, আপনার শুধু বাছাই করে নিতে হবে যেটা প্রয়োজন। এই লেভেল এর সকল তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত, যেকেউ চাইলে এটা অ্যাক্সেস করতে পারে।
উদাহরণ: ব্লগ এবং নিবন্ধ, Reddit, Tumblr, Amazon এবং eBay
লেভেল ২ “বার্গী ওয়েব”
এটিই শেষ স্তর যা আপনি সাধারণত অ্যাক্সেস করতে পারেন। এই স্তরে কিছু অন্ধকার সাইট আছে যেগুলি আপনি সাধারণত ব্রাউজ করতে পারবেন না। এই স্তরটি “সারফেস ওয়েব” এবং “ডিপ ওয়েব” এর মধ্যে বিদ্যমান যা আপনাকে “কীভাবে গভীর ওয়েবে প্রবেশ করতে হয়” এ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। এটি পর্ণ, হ্যাকিং এবং অন্যান্য জিনিসগুলির মধ্যে ফাইল শেয়ারিং নেটওয়ার্কগুলির সাথে পিয়ার টু পিয়ারও অন্তর্ভুক্ত করে।
উদাহরণ: উইকিলিকস
- Read this articles: How Does Google Search Work [2022]-TechPoth
লেভেল ৩ “ডিপ ওয়েব”
এই স্তর থেকে আপনার অনলাইন পরিচয় প্রতিস্থাপন করতে আপনার একটি “Proxy Server” প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে চাইল্ড পর্ণ, গোর, হ্যাকিং ওয়েবসাইট, ইন্টেল এক্সচেঞ্জ ও আরো অনেক । এই গভীর সাইটগুলি শুধুমাত্র Tor Browser বা অন্য কোন সফ্টওয়্যার ও বিশেষ ওয়েব ব্রাউজারগুলির মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যেতে পারে যা আপনাকে একটি Proxy দেবে। এই ব্রাউজার এর মাধ্যমে ব্রাউজ করার প্রধান কারন হচ্ছে আপনার পরিচয় গোপন রাখা এবং আপনি যার সাথে যোগাযোগ করছেন বা যে ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করছেন সেটাও গোপন রাখা।
জেনে রাখা ভাল যে, সাধারনত ডিপ ওয়েব এর কোন ওয়েবসাইটে আপনি সাধারন ব্রাউজার (যেমন- গুগল ক্রম, ফায়ারফক্স, মাইকোসফ্ট এ্যাজ ইত্যাদি) এর মাধ্যমে ঢুকতে পারবেন না।
লেভেল 4 “ডার্ক ওয়েব (Dark Web)” বা “ডার্কনেট”
ডার্ক ওয়েব এর অংশটি দুটি ভাগে বিভক্ত, এখানে আমরা জানবো যে ডার্ক ওয়েব কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।
অংশটির পার্ট ১: ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে আপনি কালো বাজারিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন টর ব্রাউজার এর মাধ্যমে, তারা মাদক এবং অস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে। তবে এটি সবচেয়ে সাধারণ জিনিস এছাড়াও আছে মানব পাচার, নিষিদ্ধ চলচ্চিত্র এবং পাইরেটস বই ইত্যাদি।
পার্ট 2: ডার্ক ওয়েব এর ২য় পার্ট অ্যাক্সেস করা সহজ নয়, কারন এটাকে অ্যাক্সেস করতে হলে আপনাকে আপনার হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করতে হবে। আপনার একটি বন্ধ শেল সিস্টেম প্রয়োজন। এখানে আপনি হার্ড চাইল্ড পর্ণ, পরীক্ষামূলক তথ্য এবং অন্ধকার তথ্য পাবেন যেমন “13 তম আইন”, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরীক্ষা এবং আটলান্টিসের অবস্থান। এটি ইন্টারনেটের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশ।
লেভেল 4B “প্রাইভেট ওয়েব”
এটি ইন্টারনেটের একটি পৌরাণিক অংশ। গোপন সরকারী সংস্থার মত, তারা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু লোকের কাছে প্রবেশাধিকার পায়। মানব মাংস, শিশু পর্ন, অস্ত্র বিক্রি, হিটম্যান, মানব পাচার, সন্ত্রাস, ইত্যাদির মতো আরও অনেক গুরুতর সমস্যা রয়েছে। এটি আপনার ওয়েবের গভীরতম অংশ যা খুবই ভয়ঙ্কর ও বিপদজনক এজন্য এখানে প্রবেশ করা উচিত নয়।
লেভেল 5 “মারিয়ানাস ওয়েব”
এই গভীর স্তরটি যুদ্ধক্ষেত্র ধারণ করে। কেউ এই স্তরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে না। সরাসরি প্রবেশ করা অসম্ভব। এটি একটি ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই স্তরে ঠিক কী আছে তা কেউ জানে না। অনেকে বলে যে এর প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝার পক্ষে খুব বড় এবং জটিল। তাইতো কেউ ইচ্ছাও করেনা এখানে প্রবেশ করার।
সর্বশেষ কিছু কথা
বন্ধুরা, আসা করি তোমাদের সারফেস ওয়েব ও ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আগের থেকে কিছুটা হলেও বেশি ধারনা হয়েছে। এখন হয়তো তোমার মনে হবে যে, এতদিন যা যেনে এসেছি সেটা ভুল। কারন আমরা যে ওয়েব প্লাটফর্মগুলোকে এতদিন ইন্টারনেট জগত এর বড় অংশ চিন্তা করতাম (যেমন- ইউটিউব, ফেসবুক, গুগল, টুইটার ইত্যাদি) এটা আসলে ইন্টারনেট জগতের সামান্য একটা অংশ।
কারন এই ডার্ক ওয়েব এর মধ্যেও ফেসবুক, ইউটিউব এর মত বিশাল বিশাল সোশ্যাল প্লাটফর্ম আছে যেখানে যেকেউ পরিচয় গোপন রেখে কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
সর্বশেষে, যে কথাটি বলে শেষ করব সেটা আপনি পরামর্শ বা আমার মতামত হিসেবে মনে করতে পারেন। কোন বিষয় না জেনে বুঝে ব্যবহার করা ঠিক নয় এতে করে বড় কোন ক্ষতি হতে পারে। তাই কেউ যদি ইচ্ছা পোষন করেন যে আমি ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে দেখবো।
আমার মতামত- না ব্যবহার করাটাই ভাল। কারন এটা বিশ্বের বড় বড় সাইবার নিরাপত্তা বাহিনীরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছে যে কারা কারা এটা ব্যবহার করছে।