এফিলিয়েট মার্কেটিং কি (Affiliate Marketing) এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

Home / Single Post

বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং পেশা দেশে বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ছাত্র ছাত্রী, বেকার অথবা পেশাজীবী অনেকেই পার্ট টাইম জব হিসেবে এফিলিয়েট করছেন বা করতে চাচ্ছেন। তবে চাইলে একে ফুল টাইম জব হিসাবেও একটু বেশি সময় দিয়ে ঘরে বসেই প্রচুর আয় করা সম্ভব।

প্রথমে জেনে নিতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করব?  আমরা কেন এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করব? এই কাজ কি সহজ? আমি পারবো? কিভাবে শুরু করতে পারি? এরকম হাজারো কেন থাকতে পারে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি (Affiliate Marketing)?

বড় বড় মার্কেট প্লেস যেমন অ্যামাজন বা অন্য কোন কোম্পানী যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং চালু রেখেছে, সেখান থেকে আপনার পছন্দের কোন প্রোডাক্ট লিঙ্ক আপনার কোন সাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে এড করলে আর সেই লিঙ্ক ব্রাউজ করে যদি কেউ সেই পণ্য কিনে নেয় তবে আপনি বিক্রিত ওই পণ্যের দামের উপর নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবেন।

আরও সহজ করে বলা যায়, এফিলিয়েট মার্কেটিং হল কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কোন পণ্য অথবা কোন সেবা বিক্রি করে দেয়া এবং প্রতিটি বিক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয়ের মূল্যের ওপর % হারে কমিশন পাওয়া। যত পণ্য বা সেবা বিক্রি হবে আপনার আয় ততই বাড়তে থাকবে। পণ্য পৌঁছনো বা পণ্য সংক্রান্ত কোন দায় দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে না।

আপনি কেবল আপনার সাইট বা চ্যানেলের জন্য প্রমোশন করবেন, এসইও করবেন যাতে ক্রেতারা সার্চ দিলে সহজেই আপনার সাইট বা চ্যানেল খুঁজে পায়। এজন্য অবশ্যই আপনার সাইট এবং চ্যানেলে ভালো কনটেন্ট দিতে হবে। এসইও অনুযায়ী আপনাকে যথাযথ কিওয়ার্ডও নির্বাচন করে নিতে হবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এ যে সকল কোম্পানি অফার করে থাকে তাদের অটো সফটওয়্যার থাকে। অটো সফটওয়্যারের মাধ্যমে এফিলিয়েট বিক্রয়ের উপর তারা বিভিন্ন কমিশন প্রদান করে থাকে। কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান ভেদে সাপ্তাহিক, মাসিক বা যে কোন সময় আপনার পেমেন্ট তুলতে পারবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কেনো এতটা জনপ্রিয় এবং আপনি কেন করবেন?

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি (Affiliate Marketing)
Image by Freepik

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য পণ্য বা সেবা কোনগুলো?

১। ডিজিটাল পণ্য

যে সকল পণ্যে সাদৃশ্য নয় অর্থাৎ ভার্চুয়ালি ব্যবহার করতে হয়, সে সকল পণ্য হচ্ছে ডিজিটাল পণ্য। যেমন  ওয়েব হোস্টিং, ই-বুক,ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন, কোন সফটওয়্যার, ভিডিও, অনলাইন  ক্লাস, ইত্যাদি। যারা অনলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ডিজিটাল পণ্য। ডিজিটাল পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ৫% থেকে শুরু করে ৭০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়।

২। ফিজিক্যাল পণ্য

যে সকল পণ্য আমরা প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করে থাকি। যেমন, ফার্নিচার, পোশাক-পরিচ্ছেদ, ইলেকট্রিক পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফলমূল এবং খাবার ইত্যাদি । এসক সকল পণ্য 2%  থেকে শুরু করে 20% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়। এ সকল পণ্য নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে অবশ্যই ডেলিভারি দেওয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। আপনি যে কোম্পানির পণ্য কিক্রি করবেন সে কোম্পানি ঠিকমতো ডেলিভারি দিচ্ছে কিনা, এই সমস্ত ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

৩। লীড জেনারেশন

এফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আরও একটি জনপ্রিয় পণ্য হচ্ছে লিড জেনারেশন। আপনি শুধুমাত্র তাদের পণ্যের জন্য মার্কেটিং করবেন এবং আপনার ক্রেতারা তাদের টাকা খরচ করে কোন পণ্য কিনতে হবে না কিন্তু আপনি কমিশন পেয়ে যাবেন। যেমন, চ্যানেল সাবস্ক্রাইব, অ্যাপস ডাউনলোড-ইনস্টল,অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্ সাইনআপ, ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন, ভিডিও ভিউজ।

এফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?

আপনি যদি প্রফেশনালি এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রথমে ভালোভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে হবে। এ জন্য আপনি নিচের দুইটি মাধ্যম অবলম্বন করতে পারেন।

১। ফ্রি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখা

এটি হচ্ছে ফ্রি মেথড। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে হলে আপনাকে ইউটিউবে এফিলিয়েট মার্কেটিং লিখে সার্চ করতে হবে এতে অনেক ধরনের রিসোর্স বা টিউটরিয়াল রয়েছে সেগুলো দেখে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং সহজেই শিখতে পারেন। আবার গুগলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং লিখে সার্চ করলেও অনেক রিসোর্স পাবেন সেগুলো দেখেও কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখে নিতে পারবেন।

২। পেউড ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখা

টাকা খরচ করেও এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখা যায়। আপনি যদি কোনো ট্রেনিং সেন্টার বা কোন কোর্স ক্রয় করে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে তার মধ্যে একটি সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। তবে সে বিষয়গুলো পরবর্তীতে গুগল বা ইউটিউবে সার্চ করে আপনাকে নিজে নিজেই শিখে নিতে হবে। এর জন্য আপনাকে ব্যয় করা লাগতে পারে 10 হাজার টাকা থেকে শুরু করে 50 হাজার টাকা পর্যন্ত।

মাসে কত টাকা আয় করতে পারবো?

কষ্ট করে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখলেন, সময় ব্যয় করে, ফ্রি অথবা টাকা খরচ করে। কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন? এ প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর নেই। আপনার যদি একটি ভাল মানের ওয়েব সাইট থাকে অথবা একটি ভালো মানের ইউটিউব চ্যানেল থাকে, আর সেখানে যদি আপনার এফিলিয়েট পণ্যটির লিংক দেন তাহলেই হয়ে গেল।

সেই লিঙ্ক থেকে যত বেশি বিক্রয় হবে তত টাকা আপনার কমিশন হতে থাকবে এর কোনো শেষ সীমানা নেই। তাই এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো একটি মুক্ত বা স্ট্যান্ডার পেশা। তবে প্রফেশনালি কাজ করলে ২০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা আয় করা তেমন কঠিন নয়।

পড়ুনঃ

বেশি টাকা আয় করার উপায়

আপনি যদি এফিলিয়েট মার্কেটিং করে বেশি টাকা আয় করার উপায় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে বেশি বেশি মার্কেটিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। বেশি কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। নিচে কিছু রিসোর্স দেওয়া হলো যেগুলো অবলম্বন করলে আপনার বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং অনেক বেশি পরিমানে আয় করার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

১। সঠিক পণ্য নির্বাচন করা

এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আসতে হলে সঠিক পণ্য নির্বাচন করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন সব পণ্য নির্বাচন করতে হবে যে সকল পণ্যের উপর ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। কমিশনের হারও বেশি। তাই পন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বার বার চিন্তা করাটা জরুরী। আপনি যত বেশি রিসার্স করবেন, এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনার সফলতা তত দ্রুত আসবে।

২। সঠিক কোম্পানী নির্বাচন

কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে কোম্পানির পণ্য আপনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন সে কোম্পানির পণ্যটির কোয়ালিটি, ডেলিভারি সিস্টেম এবং কাস্টমার এর গ্রহনযোগ্যতা কেমন। এসব বিষয়গুলো যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি সেই কোম্পানির পণ্য নির্বাচন করতে পারেন।

৩। আপডেট মার্কেটিং পদ্ধতি অনুস্বরন করা

এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে বর্তমানে ভার্চুয়াল যে আপডেট মার্কেটগুলো রয়েছে এগুলোতে আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে। আপনি যত বেশি মার্কেটিং করতে পারবেন আপনার পণ্য বেশি বিক্রয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর যত বেশি বিক্রি হবে আপনার ব্যবসার সফলতা ততো দ্রুত আসবে। আপডেট মার্কেটিংগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় মার্কেট হচ্ছে, ইমেইল মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।

৪। ওয়েব সাইট তৈরি করা এবং  এস.ই.ও. করা

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে প্রথমে একটি তথ্যবহুল ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। সে ওয়েবসাইটে পণ্যের রিভিউ খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে। ভালো কোয়ালিটির ছবি দিতে হবে যেটা দেখে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়।

ওয়েবসাইটে এমনভাবে কনটেন্ট সাজাতে হবে যাতে তা খুব সহজেই ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে যায়। ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার জন্য বিভিন্ন মার্কেটিং বা এস.ই.ও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) করাতে হবে। 

৫। ডিজিটাল মার্কেটিং করা

এফিলিয়েট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত যতগুলো মার্কেটিং সিস্টেম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম মার্কেট হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং ভার্চুয়ালি করি তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। বেশকিছু ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেম এর নাম যেমন, ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, ফেসবুক মার্কেটিং, টুইটার, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ব্লগ কমেন্টিং, গেষ্ট ব্লগিং ইত্যাদি।

৬। সোশ্যাল সিগনাল এর প্রতি খেয়াল রাখা

সোশ্যাল সিগন্যাল বলতে বুঝি, যেসকল সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি মার্কেটিং করবেন তার সিগনালগুলো সবসময় খেয়াল রাখা। যেমন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সেটাতে ক্রেতারা কি কি কমেন্ট করছে বা কি জানতে চাচ্ছে সে বিষয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এবং তাদের সাথে কমিউনিকেশন রাখতে হবে তাহলে আপনার বিক্রয় অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

উপসংহার

আমরা আশাকরি আপনি অবশ্যই অনলাইনে ইনকামের জন্য সফলতা লাভ করুন এবং সেই পরামর্শই সবসময় দিয়ে থাকে তাই। ভালোভাবে কাজ শিখুন, বিভিন্ন অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে জানুন এবং যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিন তারপর কাজে নেমে পড়ুন। আপনি অবশ্যই সফল হবেন। আমরা সব সময় এই আশাই করি।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

We have over 230 satisfied and happy customers.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit ut elit tellus.