প্যাসিভ ইনকাম নিয়ে কেন সকলের ভাবা উচিত? বর্তমান সময়ে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। কেমন হবে যদি আপনাকে বলা হয় যে খুব বেশি কাজ না করেই বেশি আয় করতে পারবেন? শুনতে অবাক লাগছে? অবাক করার মত ব্যাপার হলেও প্যাসিভ ইনকাম এর ধারণা বা বৈশিষ্ট্য অনেকটা এই ধরনের।
প্রতি মাসে যদি সাধারণ আয়ের পাশাপাশি একটি স্বয়ংক্রিয় আয়ের মাধ্যম চান, তাহলে অবশ্যই আপনার প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে জানা উচিত। চাকরির পাশাপাশি অথবা পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের একটা উৎস থাকলে কতই না ভালো হয়। প্যাসিভ আয় করতে একটু সময় আর একটু কষ্ট এরই মধ্যে দিয়ে এই আয়ের উৎস তৈরি করা যায়।
টাকা সবারি প্রয়োজন আর সেটা এক্টিভ হোক অথবা প্যাসিভ। আমরা সবাই চাই কম পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করতে । কিন্তু কম পরিশ্রমের মাধ্যমে টাকা আয় করা এতটা সহজ কাজ নয়। শত পরিশ্রমের পর টাকা আয়ের উৎস বাহির হয়, একবার আয়ের উৎস বাহির হলে সেখান থেকেই টাকা আসতে আর আসতে থাকে।
প্যাসিভ ইনকাম কি?
খুব বেশি বাড়তি এফোর্ট না দিয়ে বা সবসময় সরাসরি কাজ না করে আয়ের যে পথ তাকেই বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম। অনেকটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আয়ের সাথে তুলনা করা যায় প্যাসিভ ইনকামকে। মূলত যে আয়ের জন্য শুধুমাত্র একবার প্রচেষ্ঠা, শ্রম বা অর্থ প্রদান করা হয় ও এরপর অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার বার আয় হতে থাকে, সেই ধরণের আয় হলো প্যাসিভ ইনকাম।
মনে করুন, আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করে থাকেন অর্থাৎ ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেবে আপনি কাজ করে অর্থ উপার্জন করবেন। এটা প্যাসিভ ইনকামের মধ্যে পড়ে না। কারণ সে যদি তার ক্লায়েন্টের কাজ ঠিকভাবে না করে তাহলে সে অর্থ উপার্জন করতে পারবে না।
আর আপনি যদি সেই সকল ডিজাইনগুলো মাইক্রো স্ট্রোক সাইটে আপলোড করে রাখেন আর সেখান থেকে আপনার তৈরি কৃত ডিজাইন যদি সারা বছর ধরে বিক্রি হয় তাহলে আপনি সেখান থেকে সারা বছরই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটাকেই মূলত আমরা প্যাসিভ ইনকাম বলে থাকি।
কাঙ্খিত প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো
প্যাসিভ ইনকাম করার নানা মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে থেকে সবচেয়ে ইফেকটিভ কয়েকটি মাধ্যম নিম্নে আলোচনা করা হলো। কেউ যদি প্রফেশনালি কাজ করে তাহলে বাংলাদেশি টাকায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা ইনকাম করা কোন ব্যাপারি নয়।
১। অনলাইনে ডিজাইন বিক্রয় করে
গ্রাফিক্স ডিজাইন করেও প্যাসিভ আয় করতে পারেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন অনেক সময়ের ব্যাপার। আপনি যদি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে থাকেন তবে আপনি মাইক্রোস্টোক সাইট গুলোতে একাউন্ট ক্রিয়েট করে প্যাসিভ আর্নিং শুরু করতে পারেন।
মনে রাখবেন একবার ডিজাইন তৈরি করলে এটা সারাজীবন এর জন্য স্টোক সাইটে থাকবে, যতবার সেল হবে ততবারই একটা কমিশন পাবেন স্টোক সাইট থেকে। বর্তমানে এধরনের প্লাটফর্ম গুলো বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং প্লাটফর্ম গুলি থেকে সকলের প্রত্যাশাও বাড়ছে সাথে সাথে আপনার স্বয়ংক্রিয় আয় তৈরি হচ্ছে।
২। স্টক কন্টেন্ট বিক্রি করে
অনেকের বিভিন্ন কাজে, সাউন্ড, ভিডিও, ইমেজের মত ডিজিটাল কন্টেন্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কাজের গতি বৃদ্ধি করতে, এই জিনিসগুলো কিন্তু এখন মানুষ কিনে নেয়। তাই আপনি যদি অবসর সময়ে ছবি তোলা, গান গাওয়া কিংবা স্কেচিং করে থাকেন আপনি চাইলে তাহলে এই পথে আপনি সহজে আয় করতে পারবেন।
কিভাবে অনলাইনে কন্টেন্ট বিক্রি করবেন?
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাইটে নিজের কন্টেন্ট আপলোড করে নিজের ইনকাম বুঝে নিতে হবে। আপলোড করার পূর্বেই যাচাই বাছাই করে নিন যে, টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন সাইটগুলো বিশ্বস্ত রয়েছে। প্রত্যেক ব্র্যান্ডই তাদের প্রোডাক্ট এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্ট বিক্রয় করে থাকে।
তাই সবসময় প্রোডাক্টের এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কন্টেন্ট তৈরি করাই ভালো। এতে সাইট সমূহ যেমন লাভবান হবে তেমনি আপনার পেমেন্ট ও ভালো পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যেসব ডিজিটাল প্রডাক্টগুলো বিক্রি করতে পারবেনঃ
- ছবি
- ভিডিও
- ভেক্টর ইমেজ, ব্যনার, বিজনেস কার্ড
- মিউজিক
- ওয়েব সাইট টেমপ্লেট, আইকন, ফন্ট
৩। ব্লগিং করে
সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে ব্লগিং দ্বারা আয় করা যায়। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা কাজ করে ব্লগিং শুরু করতে পারেন। ব্লগিং শুরু করতে আপনার পছন্দের টপিকের উপরে লেখালেখি শুরু করতে পারেন। খাবারের রেসিপি নিয়ে হতে পারে, ক্যারিয়ার গাইড নিয়ে হতে পারে, ভ্রমন বিষয়ক তথ্য নিয়ে হতে পারে, রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে রিভিউ আরও অনেক ভাবে ব্লগিং শুরু করতে পারেন।
বলা যায় ২০২৩ সালে প্যাসিভ এবং অনলাইন আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল ব্লগিং। বাংলা এবং ইংরেজিতে উভয় ভাবেই সামান্য কিছু টাকা ইনভেস্ট করে একটা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ব্লগিং শুরু করা যেতে পারে।
৪। ইউটিউব চ্যানেল তৈরি
আপনি যদি ব্লগিং ভালবেসে থাকেন তাহলে আপনি ইউটিউব থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার কথা ভাবতে পারেন। এর জন্য আপনার বেশী কিছুর প্রয়োজন হবেনা শুধুমাত্র যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে ভিডিও তৈরি করার সক্ষমতা আপনার থাকতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে এমন ভিডিওগুলো তৈরি করার যে ভিডিওগুলো মানুষকে আনন্দ দেয় কিংবা তাদের প্রয়োজনে আসে।
ইউটিউবে আপনি নিজের চেহারা এবং চেহারা না দেখিয়ে উভয় ভাবে কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। ইউটিবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যাটাগরি মধ্যে হলো, Technology, review, motivation, movie review, influence guide, love advice. Make Money Online etc.
৫। ই-বুক লিখে
অনলাইকে ই-বুক লিখে আয় করা এখন খুবই সহজ একটি মাধ্যম। আপনি শুধু একবার বই লিখে পাবলিশ করে দিবেন, তারপর নিয়মিত সেই বই থেকে ইনকাম করতে পারবেন দ্বিতীয়বার কোন পরিশ্রম ছাড়াই।
বর্তমানে বাংলা-ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় বই লিখে টাকা আয় করা যায়। যেকোনো ধরণের ছোট গল্প কিংবা কাব্য ভালো কাহিনী তুলে ধরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেস্ট সেলার হইতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই অসাধারণভাবে বইটির লেখা ফুটিয়ে তোলার প্রতি নজর দিতে হবে যা পাঠকরা প্রত্যাশা করে।
বাংলায় ই-বুক পাবলিশ করার সাইটঃ
ইংরেজিতে ই-বুক পাবলিশ করার সাইটঃ
৬। অ্যাপ তৈরি
আপনার মাথায় যদি কোন ধরনের ফাংশনাল এপ্লিকেশনের আইডিয়া থাকে, আপনি নিজে না পারলে কোন অ্যাপ ডেভোলপারকে দিয়েও অ্যাপ তৈরি করে নিতে পারেন। আর যদি আপনি কোন গেমের অ্যাপ তৈরি করতে চান সেক্ষেত্রেও আপনাকে অবশ্যই গ্রাহকের পছন্দের চাহিদার উপর ভিত্তি করেই তৈরি করে ফেলতে পারেন পছন্দের সেই গেম।
সেই প্লে-স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে যদি হিট হয় তাহলে আপনাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। সম্ভব হলে আপনি একটি মোবাইল অ্যাপও বানিয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত লাভবান হতে পারেন যদি আপনার অ্যাপটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
৭। এফিলিয়েট মার্কেটিং করে
বর্তমানে সকলের কাছে প্যাসিভ আয়ের খুবই জনপ্রিয় একটি সাইট এই এফিলিয়েট মার্কেটিং। বিভিন্ন ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটের মধ্যে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হয়। খুব ভালোমানের বা উচ্চমানের কমিশন অর্জন করা যায় বিধায় আজকাল পছন্দের তালিকার সবার উপরে অবস্থান করছে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং।
বিষয়টা সহজ ভাষায় বললে Amazon এর নাম নিশ্চই আমরা সবাই জানি। তারা তাদের ইকমার্স সাইটে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করে। বিদেশের মানুষরা কিন্তু সরাসরি সব পণ্য অ্যামজন থেকে কিনে না। যে পণ্যটি কিনবে পূর্বে সে পণ্যটি সম্পর্কে গুগলে সার্চ দেয়। তারপর সেই পণ্যের গুনগতমান বা সুবিধা অসুবিধা জানার পর পণ্যটি কিনে নেয়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কাজ হলো, ঐ রিভিউয়ের সময় অ্যমাজনের পণ্যের লিংক দিয়ে দেয়া। এখন যদি কেউ আপনার সাইটে দেয়া অ্যামাজনের লিংকে ক্লিক করে কোন পণ্য কিনে তখন অ্যামাজন আপনাকে কমিশন দিবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সাইটগুলো:
- Amazon Associates
- impact.com
- CJ
- Avangate
৮. বাড়ি বা ফ্লাট ভাড়া দেওয়া
বিষয়টা কারো কাছে নতুন কিছু নয়। আপনি যদি একটি বাড়ী তৈরি করেন বা কয়েকটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। এই কাজের জন্য আপনাকে টাকা ব্যয় করতে হবে একবার কিন্তু আপনি সেই বাড়ীর ফ্ল্যাট ভাড়া পাবেন বার বার যতদিন আপনার বাড়ী বা ফ্ল্যাট থাকবে। এটাই হচ্ছে সেই স্বয়ংক্রিয় প্যাসিভ ইনকাম।
৯. গাড়ি ভাড়া দেওয়া
সবাই বলে থাকে ফ্লাট ভাড়া দেয়ার থেকে নাকি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার আয় বেশী। ধরুন আপনি যদি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ৪ টি CNG ক্রয় করেন। অবশ্যই প্রতিদিনের জমা পাবেন ২০০০ টাকা। আপনার গ্যারেজ ভাড়া ও অনান্য খরচ হিসাবে ৬০০ টাকা বাদ দিলে থাকে ১৪০০ টাকা। মাসে আসে ৪২ হাজার টাকা।৪০ লাখ টাকার ফ্লাটে আপনি ভাড়া পাবেন সর্বচ্চো ১৮ হাজার টাকা। অথচ ৪০ লাখের ৮ টি সিএনজি থেকে আপনার মাসে ইনকাম আসবে ৮৪ হাজার টাকা। এভাবেই প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।
উপসংহার
কোন কাজই সহজ নয়। এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হবে। প্যাসিভ ইনকামের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। শুরুতে আপনাকে অনেক কাজ শিখতে হবে এবং সময় দিতে হবে। আপনার কাজগুলো যখন মার্কেটপ্লেসে প্রতিযোগীতা করে টিকে যাবে এবং গ্রাহকের চাহিদা পূরন করবে ঠিক তখনি শুরু হবে আপনার প্যাসিভ ইনকাম।
প্যাসিভ ইনকাম কি এবং প্যাসিভ ইনকাম কিভাবে করা যায় এই বিষয়ে কোন জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শ থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। ধন্যবাদ!