অন পেজ এসইও’র শক্তি সম্পর্কে একটি গল্প:
একবার কল্পনা করুন: আপনি অনেক সময় ব্যয় করে একটি নিখুঁত ও সুন্দর ব্লগ পোস্ট তৈরি করেছেন। এটি মূল্যবান তথ্যে ভরপুর, এবং সঠিক গাইডলাইন সহ দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যা আপনার নিজের আওয়াজ দিয়ে লেখা। আপনি যখন আপনার লেখাটি সম্পন্ন করলেন তখন ‘সাবমিট‘ বাটনে ক্লিক করার পরে, আপনি পোষ্টটি গুগলে ইনডেক্স রিকোয়েস্ট দিলেন এবং তারপরেই পোষ্টটি নেট দুনিয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল।
কিন্তু, দেখা গেল দিন যায়, সপ্তাহ হয়ে যায়… অথচ আপনার এত কষ্টের পোষ্টটি বিশাল ডিজিটাল জগতের অতল গহব্বরে পড়ে রয়েছে। কিন্তু কেন?
এখানেই অন পেজ এসইও (SEO) হয়ে ওঠে আপনার কন্টেন্টের একজন সুপারহিরো। এই গোপন রসায়নটিই সার্চ ইঞ্জিনগুলি-কে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনার পৃষ্ঠাটি কী সম্পর্কে, এবং সেই সাথে এটাও বোঝায় যে কেন এটি শীর্ষে র্যাঙ্ক করার যোগ্য।
অন পেজ এসইও (On-Page SEO) কী?
অন-পেজ এসইও (On-Page SEO) বলতে বোঝায় সেই কৌশলগুলিকে, যেগুলি আপনি সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে (SERPs) আরও উপরে র্যাঙ্ক করার জন্য এবং আরও অর্গানিক ট্র্যাফিক আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে আলাদা-আলাদা ওয়েব পৃষ্ঠাগুলিকে অপ্টিমাইজ করতে ব্যবহার করেন।
আপনার বাছাই করা শব্দ থেকে শুরু করে কন্টেন্ট সাজানোর ধরণ এবং পর্দার আড়ালের টেকনিক্যাল বিষয়গুলি- সবই এর আওতায় পড়ে। তাই যে যত সুন্দরভাবে এবং কৌশল ব্যবহার করে এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখতে পারবে তার কন্টেন্ট তত দ্রুত র্যাংক করবে।
২০২৪ সালে কীভাবে অনপেজ এসইও অপ্টিমাইজেশন করবেন?
২০২৩ এর শেষের দিকে গুগল অ্যালগরিদমে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। তাই, ২০২৪ সালের জন্য বিভিন্ন অন-পেজ অপ্টিমাইজেশন কৌশল সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেট সার্চ করলে আপনি অসংখ্য কৌশল খুঁজে পাবেন। কিন্তু, এসব কৌশলের অনেকগুলিই দেখা যাবে পুরানো। যা ২০২৪ এ এসে কাজ করবে না।
তাই, আজকের এই পোস্টে, আমি শীর্ষস্থানীয় কিছু অন-সাইট এসইও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করব যেগুলিকে আপনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, ২০২৪ সালে গুগলের সর্বশেষ অ্যালগরিদমের সাথে এগুলো সত্যিই কাজ করে।
গুগল যতদূর জানিয়েছে, মেটা কীওয়ার্ড ট্যাগের উপস্থিতির আপনার ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিংয়ে কোনও প্রভাব নেই। সুতরাং, আপনি সহজেই এটি উপেক্ষা করতে পারেন। এক্ষেত্রে, আপনার ওয়েবসাইটে যে টিপসগুলি প্রয়োগ করছেন, সেগুলি সাম্প্রতিক গুগল অ্যালগরিদমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সে বিষয়ে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে।
অন-পেজ উপাদানগুলিতে অনেক HTML ট্যাগ ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগ, হেডিং ট্যাগ, ইমেজ ট্যাগ, বোল্ড অক্ষর, ইটালিক, আন্ডারলাইন, তালিকা ধরনের ট্যাগ ইত্যাদি। আমাদের ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে টার্গেট করা কীওয়ার্ডগুলিকে স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
অন-পেজ এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ: পরিসংখ্যানের বক্তব্য
- সার্চ ট্র্যাফিকের 95% প্রথম পৃষ্ঠাতেই চলে যায়। আপনি যদি সেখানে না থাকেন, তাহলে আপনি কার্যত অদৃশ্য। [সূত্র: HubSpot]
- শুধু টাইটেল ট্যাগ অপ্টিমাইজ করলে ক্লিক-থ্রু রেট (CTR) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে, কখনও কখনও 20% পর্যন্ত। [সূত্র: Backlinko]
- যেসব পৃষ্ঠা দ্রুত লোড হয়, সেগুলোর র্যাঙ্ক ভালো হওয়ার প্রবণতা থাকে। মাত্র এক সেকেন্ডের বিলম্ব ক্রেতা সন্তুষ্টি 16% কমিয়ে দিতে পারে। [সূত্র: Google]
অন-পেইজ এসইও’র মূল উপাদান (On-Page SEO Factors)
- কীওয়ার্ড রিসার্চ: আপনার লক্ষ্য দর্শকরা যেসব শব্দ বা লেখা লিখে অনুসন্ধান করে, সেগুলো খুঁজে বের করা এবং স্বাভাবিকভাবে আপনার কন্টেন্টে সেগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা।
- টাইটেল ট্যাগ: সার্চ রেজাল্টের ক্লিক করার মতো শিরোনাম। এটাকে আকর্ষণীয় করুন এবং আপনার লক্ষ্য করা কীওয়ার্ডটি যুক্ত করুন।
- মেটা ডেসক্রিপশন: আপনার টাইটেল ট্যাগের ঠিক নিচে থাকা সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এটিকে একটি বিজ্ঞাপন কপির মতো ভাবুন যা সার্চকারীদের ক্লিক করতে প্ররোচিত করে।
- কন্টেন্ট: উচ্চমানের, ইউনিক কন্টেন্ট তৈরি করুন যা পাঠকদেরকে প্রকৃতপক্ষেই সাহায্য করে। বিস্তৃত এবং পরিপূর্ন তথ্যবহুল লেখার দিকে লক্ষ্য রাখুন।
- শিরোনাম: পাঠক এবং সার্চ ইঞ্জিন উভয়ের জন্য সহজে স্ক্যান করার মতো করে আপনার কন্টেন্টকে সাজাতে H1, H2, এবং H3 ট্যাগ ব্যবহার করুন।
- ছবি: বর্ণনামূলক ফাইলের নাম, বিকল্প টেক্সট (alt text) দিয়ে এবং লোড হওয়ার সময় কমাতে কম্প্রেশন করে ছবিগুলিকে অনুকূল করুন।
- অভ্যন্তরীণ লিঙ্কিং: কৌশলগতভাবে আপনার নিজস্ব সাইটের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পৃষ্ঠাগুলির সাথে লিঙ্ক করুন। এটি ন্যাভিগেশনে সাহায্য করে এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলিকে আপনার সাইটের গঠন বুঝতেও সাহায্য করে।
- URL গঠন: সংক্ষিপ্ত, বর্ণনামূলক URL যেখানে আপনার টার্গেট কীওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, সেগুলিই অধিক পছন্দনীয়।
- মোবাইল রেসপন্সিভনেস: নিশ্চিত করুন যেন আপনার ওয়েবসাইট সমস্ত ডিভাইসে সঠিকভাবে লোড হয় এবং ভালোভাবে প্রদর্শিত হয়।
▶️ Read: এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি 2024
অন-পেইজ এসইও একটি চলমান যাত্রা
সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদমগুলি ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। গতকাল যা কাজ করেছে, আজ তা হয়তো কার্যকর নাও হতে পারে। সর্বোত্তম উপায়গুলি সম্পর্কে আপডেট থাকা এবং আপনার অন-পেইজ এসইও কৌশল ক্রমাগত পরিমার্জন করার জন্য আপনার ডেটা বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরী।
এছাড়াও, আপনাকে প্রতিনিয়ত একটি টাইম-সিডিউল মেনে কাজ করতে হবে পোষ্ট করার ক্ষেত্রে। কারন নিয়মিত পোষ্ট গুগলের কাছে সাইটের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে।
প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নোত্তর
অন পেজ এস ই ও তে কি কি করতে হয় সংক্ষেপে লিখুন?
অন পেজ এসইও একটি চলমান প্রসেস তাই, আপনাকে প্রতিনিয়ত সাইটের উন্নয়ন কাজে সময় দিতে হয়। এছাড়াও প্রতিটি পোষ্টের লেখা এসইও ফ্রেন্ডলি হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখা। যেমন – টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগ, ডিসক্রিপশন, ইমেজ, ইন্টারলিংক, এক্সটার্নাল লিংক ইত্যাদি।
অফ পেইজ এসইও বলতে কি বুঝায়?
উপরে এর উত্তর বিস্তারিত উদাহরনসহ দেওয়া হয়েছে।
অন পেজ এসইও কত প্রকার?
অন পেজ এসইও এর কোন প্রকারভেদ নেই। তবে, হ্যা এসইও এর কাজ বিবেচনা করে একে সাধারনত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – অন পেজ এসইও, অফ পেজ এসইও এবং শেষ টেকনিক্যাল এসইও।
অন পেজ এসইও ফ্যাক্টর এর উদাহরণ কোনটি?
অন পেজ এসইও ফ্যাক্টর সম্পর্কে আলোচনা উপরে দেওয়া হল। তবে, সাধারনত টাইটেল ট্যাগ, মেটা ট্যাগ, ডিসক্রিপশন, ইমেজ, ইন্টারলিংক, এক্সটার্নাল লিংক ইত্যাদির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
লোকাল এসইও কি?
লোকাল এসইও আরেকটি উদাহরন এসইও এর। এর মাধ্যমে কোন লোকাল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে তার নির্দিষ্ট জোনে এসইও করা হয়, যাতে তাকে সকলে সহজেই চিনতে পারে।
শেষ কথা
অন পেজ এসইও শুধু সার্চ ইঞ্জিনকে খুশি করার ব্যাপার নয়; এটি চূড়ান্ত এবং সেরা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা তৈরি করার বিষয়। যখন আপনি তথ্যবহুল, সুন্দর কন্টেন্ট প্রদান করেন যা বোঝা সহজ, তখন সার্চ ইঞ্জিন এবং মানুষ উভয়েই আপনাকে পুরস্কৃত করবে।
আপনি যদি নির্দিষ্ট অন-পেইজ অপটিমাইজেশনের জন্য বিভিন্ন এসইও টুলস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আমরা আপনাদের আরও গভীরভাবে নির্দেশনা দিতে পেরে খুশি হব। ধন্যবাদ!